Ajker Patrika

কাজে আসছে না ৩৪ লাখ টাকার সিগন্যাল

  • ট্রাফিক সামলাতে হাঁসফাঁস অবস্থা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।
  • তীব্র যানজটে দুর্ভোগে নাকাল নগরবাসী।
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৮: ০৭
যানজট নিরসনে রংপুর নগরীর লালকুঠি মোড়ে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট থাকলেও নেই বাতি। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা
যানজট নিরসনে রংপুর নগরীর লালকুঠি মোড়ে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট থাকলেও নেই বাতি। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা

বিভাগীয় শহর রংপুরে গত দেড় দশকে মানুষের পাশাপাশি বেড়েছে যানবাহনের চাপ। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। এতে তীব্র যানজটে দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিন বছর আগে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হলেও তা কাজে আসছে না।

রংপুর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যানজট নিরসনে রংপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পরীক্ষামূলকভাবে নগরীর পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড় এলাকায় ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ২০২২ সালের শুরুতে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই তিন স্থানে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপন করা হয়। ট্রাফিক সিগন্যাল পরিচালনায় নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড়ে বসানো হয় যন্ত্রপাতি। পায়রা চত্বরে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটপোস্টগুলো স্থাপন করা হলেও পরবর্তী সময়ে সেগুলো সরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে স্থাপন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের এক মাস পর সেগুলো বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকে সেগুলো আর ব্যবহার করা হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড়ে স্থাপন করা ট্রাফিক লাইটগুলো ভেঙে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে সিগন্যালে লাল-সবুজ, বাতি জ্বললেও সেটি কোনো কাজে আসছে না। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় যান নিয়ন্ত্রণ করছেন। হাতের ফাঁক বেয়ে আইন ভেঙে অনেকে ছুটে চলছেন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। ট্রাফিক সামলাতে হাঁসফাঁস অবস্থা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।

লালকুঠি মোড়ে কথা হলে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেল হলে এখানে যানজটে নাকাল হতে হয়। ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে প্রথম দিন বাতি জ্বলছে। এরপর থেকে এটা বন্ধ। টাকা মেরে খাওয়ার জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’

জাহাজ কোম্পানি মোড়ে কথা হয় গুপ্তপাড়ার বাসিন্দা মীর আলীর সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রংপুর নগরীর প্রাণকেন্দ্র হলো জাহাজ কোম্পানি। বিভাগীয় শহর হওয়ার পর থেকে এখানে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। তিন বছর আগে এখানে যখন ট্রাফিক সিগন্যাল লাগানো হয়, তখন অনেক আশা ছিল; কিন্তু ফল উল্টো হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই ট্রাফিক সিগন্যাল বন্ধ। এখন তীব্র যানজটে নাকাল অবস্থা আমাদের।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিকের এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগ বলেন আর নগরবাসী বলেন, কারও উপকারে আসছে না ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালগুলো। এটা এক ধরনের অপচয়। এগুলো স্থাপনের আগে চালকদের নিয়ম শেখাতে হয়। তা না হলে যানজট কখনোই কমবে না। ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালগুলোর সঠিক ব্যবহার হলে আমাদের রোদ-বৃষ্টিতে পুড়তে হবে না।’

মাহিগঞ্জ এলাকার অটোচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল কী তাক হামরা জানি না। এটা লাগে যদি দ্রুত যানজট কমে তা হলে হামাক ট্রেনিং দেউক। তাক হামরা মানি চলম। যানজট না থাকলে তো হামারে লাভ। কামাই বেশি হইবে। যানজটের কারণে ২০ মিনিটের রাস্তা ১ ঘণ্টাও যাওয়া যায় না।’

রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব পলাশ কান্তি নাগ বলেন, নগরীতে চলাচল করা যানবাহনের চালকদের ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে এ সিস্টেমটি সফলতার মুখ দেখেনি। অপচয় হয়েছে রাষ্ট্রের অর্থ। যানজট নিরসনে সবার আগে প্রয়োজন চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘এক মাস হয়েছে রংপুরে যোগদান করেছি। আসার পর থেকে দেখতেছি, সিগন্যালগুলো কাজ করছে না। ডিজিটাল সিগন্যালগুলো মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। ঠিক হলেই সেগুলো ব্যবহার করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত