Ajker Patrika

নৌকার পক্ষে কাজ না করায় নারীসহ চারজনকে মারধরের অভিযোগ

হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
নৌকার পক্ষে কাজ না করায় নারীসহ চারজনকে মারধরের অভিযোগ

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় আনারস প্রতীক প্রার্থীর নারীসহ চার সমর্থককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে নৌকা প্রার্থীর ভাই ও ছেলের বিরুদ্ধে। আহতরা বর্তমানে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। 

এ ঘটনায় আজ রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ভুক্তভোগী অনুকুল চন্দ্র রায় বাদী হয়ে নৌকা প্রার্থীর ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলুকে প্রধান আসামি করে এবং আরও ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে শনিবার (১৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১২টায় উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

অভিযুক্তরা হলেন, নৌকা প্রার্থী নূরল আমিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলু (৫৫) ও ছেলে সিয়াম (২৮) এবং নজরুল ইসলাম (৪৫), মোস্তফা (৩৫), কেশরুজ্জামান বাবু (৪৫), মহিদুল ইসলাম জুয়েল (২৮), মিন্টুসহ (৪০) আরও অনেকে। 

আহতরা হলেন, উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি এলাকার অনুকুল চন্দ্র রায় (২৭), মহেশ চন্দ্র (৩৫), মহেশ চন্দ্রের মা শ্রীমতি ফুলতি রানী (৫৫) ও বাবলু (৩৫)। 

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অনুকুল চন্দ্রের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আগামী ২৯ ডিসেম্বর সিন্দুর্না ইউনিয়নের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই উপনির্বাচনের নৌকা প্রার্থীর নূরল আমিনের ভাই নূর মোহাম্মদ বাবলু, ছেলে সিয়ামসহ অন্য অভিযুক্তরা শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় আমার বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করে। এ সময় আমি বাড়ির সামনে বের হলে নৌকা প্রার্থীর লোকজন আমাকে আনারস প্রতীক প্রার্থী অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করতে নিষেধ করে এবং নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে বলে। এতে রাজি না হলে তারা আমার ওপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। আমার চিৎকার শুনে মহেশ, শ্রীমতি ফুলতি রানী ও বাবুল বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করে আহত করে। পরে স্থানীয়রা এসে আমাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান।’ 

এ ঘটনায় আহত মহেশ চন্দ্র বলেন, ‘অনুকুলের চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে গেলে নৌকা প্রার্থীর লোকজন আমাদেরকেও মারধর শুরু করে। আমাদের কি অপরাধ? আমরা কাকে সমর্থন করব সেটা একান্ত নিজের ব্যাপার। কাউকে জোড় জুলুম করে কিছু করা যায় না। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’ 

আহত শ্রীমতি ফুলতি রানী বলেন, ‘আমরা যদি নৌকার কাজ না করি তাহলে আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিবে। আমাদের আরও মারধর করবে বলে তারা হুমকি-ধমকি দেন।’ 

এ বিষয়ে নৌকা প্রার্থী নূরল আমিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলু বলেন, ‘আমি অনুকুলকে চিনি না। ওর সাথে আমার কোনো দিন কথাই হয়নি। মারধর করতে যাবো কেন! এটা মিথ্যা। তবে আমাদের লোক তাকে ডাকছিল। তার ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। তার যেটা ইচ্ছে সেটার পক্ষে কাজ করবে।’ 

এ বিষয়ে সিন্দুর্না ইউনিয়নের উপনির্বাচনে আনারস প্রতীকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী অ্যাড. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী নূরল আমিনের ভাই বাবলু ও সিয়ামসহ কয়েকজন আমার লোকজনকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলে। তারা রাজি না হওয়ায় তাদের বেধড়ক পেটানো হয়। তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’ 

প্রতিপক্ষের মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আহত অনুকুল চন্দ্র রায়এ বিষয়ে জানতে নৌকা প্রার্থী নূরল আমিনের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি কলটি কেটে দেন। 

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আল আকসা বলেন, ‘আহত চারজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ 

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এ নিয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, ‘কেউ মারধরের শিকার হলে তারা আইনের আশ্রয় নিবে। পুলিশ তদন্ত ব্যবস্থা নিবে। এ ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন যদি নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত