Ajker Patrika

অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সেটেলমেন্ট অফিসে সেবা না মেলার অভিযোগ

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২০: ৪৯
অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সেটেলমেন্ট অফিসে সেবা না মেলার অভিযোগ

অতিরিক্ত টাকা ও দালাল ছাড়া মিলছে না জমির রেকর্ড, পরচা, মৌজার নকশাসহ সেটেলমেন্ট অফিসে বিভিন্ন সেবা। এসব অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, জেলা অফিসের অধীন বিভিন্ন উপজেলায় ভূমির মালিকেরা ফি-সহ পরচার নকল প্রদান, খতিয়ান ও নকশা প্রদান এবং ফি ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী খানসামা উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে জানা গেছে, সিটিজেন চার্টারের সঙ্গে মিল নেই সেবার। ভূমি রেকর্ড ও জরিপসংক্রান্ত সেবা ঘুষ ছাড়া মিলছে না। মিলছে না জমির পরচা আর মৌজার নকশাও। সেবা পেতে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। টাকা ছাড়া সেবা নিতে গেলেই হতে হয় হয়রানির শিকার। তবে এসব বিষয়ে ভয়ে অনেকে মুখ খুলছেন না।

এ ছাড়া সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ে গতকাল দালালদের আনাগোনা দেখা গেছে। সেবা নিতে আসা মানুষের কাছ থেকে অর্থ কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এদিন দালাল সন্দেহে অফিসের সামনে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলা দু-একজনের পরিচয় জানতে চাইলে সাংবাদিক বুঝতে পেরে দ্রুত তাঁরা স্থান ত্যাগ করেন। দালালদের সঙ্গে এই অফিসের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাস চন্দ্র রায় জড়িত বলে অভিযোগ অনেকের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠ পরচা নিতে গেলে আবেদনে ২০ টাকার কোর্ট ফি এবং ১০০ টাকা অনুলিপি বাবদ আদায় করে সেবা দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু পরচা প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা নেওয়ার সত্যতা মিলছে।

উপজেলার আংগারপাড়া মৌজার জমির পরচা নিতে আসা আসাদুজ্জামান আসাদ নামের এক যুবক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরচা নিতে গেলে কর্মচারীরা ৫০০ টাকা ছাড়া দেবে না বলে জানান। সেটাও কয়েক দিন ঘুরে পাইনি। সামনের সপ্তাহে আসতে বলেছেন। এত ভোগান্তি এখানে কেন?’

সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ে সেবা নিতে এসে হয়রানির শিকার হোসেনপুর মৌজার সুধীর সেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই অফিসের মাটিতে পা দিলেই টাকা ছাড়া কেউ ঘুরে আসতে পারেন না, সর্বোচ্চ দুর্নীতির জায়গা সেটেলমেন্ট অফিস।’

ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘১০০ টাকার পরচা ৫০০ টাকা ছাড়া দেছেই না বাহে। সেটাও নিবার জন্যও ফির কয়েক দিন ধরে ঘুরতে হচ্ছে অফিসে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সারা দিন অফিসে এসেও কাজ না হয়েও ঘুরে যেতে হচ্ছে। ভ্যান চালালেও তো কিছু টাকা উপার্জিত হইতো, এত ভোগান্তি।’

তবে এসব বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত কোনো টাকা আমরা গ্রহণ করি না।’

সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মির্জা জিকরুল হক বেগ মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ফি’র বেশি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কয়েকটি উপজেলার দায়িত্বে থাকায় ওই অফিসে আমি নিয়মিত যেতে পারি না তাই এটা সম্পর্কে ধারণা নেই। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) আমাকেও ফোনে কল দিয়ে একজন এমন অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভারপ্রাপ্ত খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি অবগত হলাম। তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

দিনাজপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. শামছুল আজম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন ঘটনা কখনোই আমরা প্রশ্রয় দিই না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত