Ajker Patrika

নেচে-গেয়ে ঝাড়ফুঁক দিয়ে অবশ রোগীর চিকিৎসা!

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২১, ২৩: ২২
নেচে-গেয়ে ঝাড়ফুঁক দিয়ে অবশ রোগীর চিকিৎসা!

দশ বর্গফুট জায়গা বাঁশ দিয়ে ঘেরা, চারকোনায় চারটি কলাগাছ, ওপরে সামিয়ানা। সামিয়ানার নিচে মাঝখানে একটি চেয়ারে বসানো হয়েছে প্যারালাইজড সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে। ঝাড়ু হাতে কবিরাজ নেচে নেচে গান গাইছেন। নাচ গানের তালে বৃদ্ধার চারদিকে ঘুরছেন। বৃদ্ধাকে ঝাড়ু দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছেন মাথা থেকে পা পর্যন্ত। তাঁর সঙ্গে হলুদ শাড়ি পরে নেচে নেচে ঘুরছে কয়েকজন কিশোরী। তারাও বৃদ্ধার মুখমণ্ডল মুছে দিচ্ছে শাড়ির আঁচল দিয়ে। এসব দৃশ্য উপভোগ করছে উৎসুক জনতা।

আজ শনিবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের নশরতপুর গ্রামে কবিরাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। এভাবে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় চিকিৎসা করে আসছেন কবিরাজ ফুল মিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুল মিয়ার তেমন লেখাপড়া নেই। এক সময় তিনি গাইবান্ধা শহরে কুলির কাজ করতেন। সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে ২৫ বছর ধরে কবিরাজি করছেন তিনি। বিশেষত প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসা করেন ফুল মিয়া। প্রতি রোগীকে ৩০-৫০ মিনিট ঝাড়ফুঁক দেন। এ জন্য একজন রোগীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা ফি নেন। ঝাড়ফুঁকের সময় তাঁর সঙ্গে পাঁচ-ছয় জন কিশোরী থাকেন। এরা সবাই ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তাদেরও কিছু সম্মানী দেন কবিরাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোরী বলে, এতে তাদের আনন্দ লাগে। রোগীও ভালো হয়।

এ পর্যন্ত কতজন রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই কবিরাজ ফুল মিয়ার কাছে। কিন্তু প্রতিদিন দূর-দূরান্ত আসেন রোগীরা। ফুল মিয়ার দাবি, তাঁর কাছে আসা সব রোগীই সুস্থ হন। রোগীদের তিনি গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করেন।

ফুল মিয়া বলেন, ঝাড়ফুঁক করতে অনেক সময় লাগে। এ সময় রোগীরা বিরক্ত হন। ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন। তাই বিনোদনের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করা হয়। ঝাড়ুর ব্যবহার কেন করেন জানতে চাইলে কবিরাজ বলেন, ঝাড়ুটি বন (দোয়া তাবিজ) করা। এটি রোগীর শরীরে ছুঁয়ে দিলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

কবিরাজের কাছে আসা ওই বৃদ্ধার এক আত্মীয় বলেন, এই কবিরাজের কাছে ঝাড়ফুঁক নিয়ে অনেকে সুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁরা এখানে এসেছেন।

তবে নশরতপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক আবদুস সোবহান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজ ফুল মিয়া এভাবে অপচিকিৎসা দিচ্ছেন। তাঁর খপ্পরে পড়ে নিরীহ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। রোগ তো ভালো হচ্ছেই না বরং তাঁরা টাকা পয়সা নষ্ট করছেন।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন আ.ক.ম. আখতারুজ্জামান বলেন, গ্রামাঞ্চলে এসব কুসংস্কার এখনো আছে। এ ধরনের অপচিকিৎসার কোনো ভিত্তি নেই। এটা সম্পূর্ণ কুসংস্কার এবং প্রতারণা। রোগব্যাধি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। যেকোনো রোগের জন্য হাসপাতাল রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঝাড়ফুঁকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও রোগী মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এসব কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ জাতীয় কিছু সেবন করলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এদের কাছ থেকে বিরত থাকাই ভালো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত