Ajker Patrika

নিখোঁজ ছেলে মিয়ানমার থেকে ফিরছে, তর সইছে না মেহেরুন নেসার

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
নিখোঁজ ছেলে মিয়ানমার থেকে ফিরছে, তর সইছে না মেহেরুন নেসার

পাঁচ বছর পর মায়ের কোলে ফিরছেন আবু হানজালা (৩২)। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন মা মেহেরুন নেসা (৭০)। পাঁচ বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন হানজালা। মানসিক ভারসাম্যহীন হানজালা অবশেষে মিয়ানমার থেকে ফিরছেন। 

আগামীকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) আবু হানজালা মিয়ানমারে আটকে পড়া ১৪৪ বাংলাদেশির সঙ্গে দেশটির নৌবাহিনীর জাহাজে করে দেশে ফিরছেন। এই বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন। 

আবু হানজালার বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাসকান্দর গ্রামের পাঠানপাড়ায়। তিনি ওই গ্রামের মৃত একরামুল হকের ছেলে। ২০১০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন হানজালা। 

গতকাল সোমবার বিকেলে আবু হানজালাদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, পাঁচ ছেলে ও তিন কন্যাসহ ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল একরামুল–মেহেরুন দম্পতির। নব্বই দশকের শেষের দিকে সরকারি (ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিল) লটারির টিকিট জালিয়াতি সংক্রান্ত একটি মামলায় জড়িয়ে পড়েন একরামুল হকের বড় ছেলে রেজাউল করিম। এ সময় রেলওয়ের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন একরামুল হক। অবসরের সব টাকা ছেলের মামলা চালাতে খরচ হয়ে যায়। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০০৩ সালে মারা যান একরামুল হক। 

এরপর পাল্টে যায় পরিবারটির আর্থিক অবস্থা। তিন বেলা খাবারের সন্ধানে বড় তিন ছেলে রেজাউল করিম, এনামুল হক বাবু ও মানিকুল ইসলাম চলে যান ঢাকায়। রিকশা চালিয়ে রোজগার করেন তাঁরা। সবার ছোট আবু হানজালাকে নিয়ে অপর ভাই আবু তালহা সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় একটি প্লাস্টিকের কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেন। বাড়ি থেকে কর্মস্থলে আসা–যাওয়ার পথে একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় মারাত্মক আঘাত পান আবু হানজালা। সে যাত্রায় প্রাণে বাঁচলেও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। 

আবু তালহা আজকের পত্রিকাকে জানান, চিকিৎসার জন্য ছোট ভাইকে পাবনা মানসিক হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রায়ই বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যেতেন। এক মাস, দেড় মাস পর গ্রামের লোকজন কোথাও তাঁর দেখা পেয়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। কিন্তু ২০১৮ সালের প্রথম দিকে হানজালা নিখোঁজ হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

আবু তালহা বলেন, ‘সবাই ধরে নিয়েছি, সে আর বেঁচে নাই। হানজালার কথা সবাই প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। গত রোববার (২১ এপ্রিল) গভীর রাতে একজন ব্যক্তি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বলেন, মিয়ানমার থেকে দেশে আসছে আবু হানজালা। শুনেই আমরা আনন্দ কেঁদে ফেলেছি।’ 

পাঁচ বছর আগে নিখোঁজ হন আবু হানজালাআজ মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার থেকে মোবাইল ফোনে আবু তালহা বলেন, ‘পুলিশের কথা মতো আমি এবং আমার বড় ভাই মানিকুল ইসলাম এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছি। কাল বুধবার সকালে কক্সবাজার সদর মডেল থানার পাশে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে আমাদের যেতে বলেছে পুলিশ। সেখানে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’ 

মা মেহেরুন নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছেলেকে ফিরে পাব, এমন আশায় বুক বেঁধেছিলাম। আল্লাহপাক আমার কথা শুনেছে।’ 

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমার মানসিক রোগী ছেলে কীভাবে মিয়ানমার গেল তা যেন তদন্ত করেন। জানি না এভাবে কত মায়ের সন্তান দেশের বাইরে মানবেতর জীবনযাপন করছে?’ 

সৈয়দপুরের স্কুলশিক্ষক নাসিম আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আসলে ভাবিয়ে তুলেছে। একজন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কীভাবে সৈয়দপুর থেকে দেশের সীমান্ত পেরিয়ে যেতে পারে। এর পেছনে মানবপাচারকারী বা মাদক কারবারিরা জড়িত থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করা উচিত।’ 

উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের ১৪৪ জন নাগরিক নানাভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন। অনেকে বন্দীও ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ওই বাংলাদেশিদের যে জাহাজে করে দেশে আনা হবে সেই জাহাজেই বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ২৮৫ জন সীমান্তরক্ষীকে ফেরত পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত