Ajker Patrika

ফেসবুক লাইভে সনদ ছিঁড়ে ফেলা সেই বাদশা এখন কৃষক

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ১৯: ৫৪
Thumbnail image

প্রায় ২০টি সরকারিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও চাকরি পাননি নীলফামারীর ডিমলার যুবক বাদশা মিয়া। একসময় পার হয়ে যায় সরকারি চাকরির বয়সের সীমা। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে নিজের শিক্ষাজীবনে অর্জিত সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। এখন বেকারত্বের জীবন নিয়ে বাঁচার সংগ্রাম করছেন। সংসারের হাল ধরতে বাদশা শুরু করেছেন কৃষিকাজ। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের ধানখেতে দেখা হয় বাদশা মিয়ার সঙ্গে। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে নিজের জমির ধান কেটে কাঁধে নিয়ে বাড়ির উঠানে নিয়ে আসছেন ওই যুবক। বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে মাঠের কাজে সহযোগিতা করছেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে সংসারের হাল ধরেছেন বাদশা। সামান্য আবাদি জমির ফসল দিয়ে কোনো রকমে দিনযাপন করছে তাঁর পরিবার।

প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন জানান, বাদশা মিয়া এ গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মহুবার রহমানের ছেলে। অভাবের সংসারে ছয় ভাইবোনের মধ্যে বাদশাই সবার বড়। ২০১৪ সালে তিনি নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তবে অর্থের অভাবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। বাদশা ২০০৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল, ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে আলিম সম্পন্ন করেন।

তীব্র রোদ উপেক্ষা করে নিজের জমির ধান কেটে কাঁধে নিয়ে বাড়ির উঠানে নিয়ে আসছেন বাদশাবাদশার বাবা মহুবার রহমান বলেন, ‘চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ায় বেশ কিছুদিন থেকে হতাশায় ভুগছিল বাদশা। দিনে দিনে হতাশা বেড়ে যাওয়ায় সে তার একাডেমিক সার্টিফিকেটগুলো কাউকে না জানিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। বর্তমানে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। নিজের মাত্র তিন বিঘা জমি। তিন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর এখন সঞ্চয় বলে কিছু নেই। ছোট ছেলে বিএ পড়ছে। সবকিছু মিলে বেকার ছেলে বাদশাকে নিয়ে মাঠে কাজ করছি।’

ফেসবুক লাইভে এসে সনদ ছিঁড়ে ফেলে বাদশা মিয়াজানতে চাইলে বাদশা মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বাবা খেয়ে না খেয়ে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাইবোনদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। বর্তমান সমাজে সবচেয়ে অসহায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত ছেলে। এরা না পারে চাকরি জোটাতে, আবার অর্থের অভাবে না পারে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। তাই চুপিসারে ঢাকা ও বগুড়া শহরে প্রায় সময়ে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করেছি। এলাকার কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়েছে।’

সামান্য আবাদি জমির ফসল দিয়ে কোনো রকমে দিনযাপন করছে বাদশার পরিবারবাদশা বলেন, ‘সনদ ছিঁড়ে ফেলার পর রোজ নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিস আমাকে চাকরি দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে তিন মাস চাকরি করার পর এক মাসের বেতন দেওয়ায় চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি। অপর দিকে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকায় কনস্ট্রাকশনের কাজে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে শ্রমিক হিসেবে আমাকে দৈনিক হাজিরায় কাজ দেওয়ায় তা ছেড়ে চলে আসি।’

এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাকরি ছেড়ে চলে আসার বিষয়টি জানা ছিল না। বাদশা যদি চায় তাহলে তাকে আইসিটি কিংবা অন্য কোনো বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা হবে। পরবর্তীতে সেই দক্ষতা ভিত্তিক চাকরির ব্যবস্থা করা যাবে।’

এর আগে ফেসবুক লাইভে সনদ ছিঁড়ে বাদশা বলেছিলেন, ‘আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ! কত মানুষ ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়া করে খাচ্ছে। আর আমি এত সার্টিফিকেট নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও একটা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি জোটাতে পারিনি। সার্টিফিকেট অনুযায়ী চাকরির বয়স শেষ, এখন এগুলো রেখে লাভ কী? বয়স থাকতেই তো চাকরি জোটাতে পারিনি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত