Ajker Patrika

আলোর প্রত্য়াশায় আজমির

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আলোর প্রত্য়াশায় আজমির

চোখ খুলে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছর বয়সী আজমিরের। কিন্তু সে চোখে দৃষ্টি ফিরবে কি না, সেটা এখনো বোঝা যাবে না। ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ওর চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন ফিরে যাবে ঘরে। আবার সাত দিন পর এসে জানতে হবে চোখের অবস্থা।

গত শনিবার ট্রেন ভ্রমণের সময় একটা বড় পাথর কেউ ছুড়ে মেরেছিল ট্রেনের দিকে। জানালা ছিল বন্ধ। সে বন্ধ জানালা ভেঙে পাথরটা এসে আঘাত করে আজমিরের চোখে। চোখে ঢুকে পড়ে ভাঙা কাচ। দ্রুত ওকে সৈয়দপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখান থেকে রংপুর। রংপুরের চিকিৎসকেরা বলেন, দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। বিমানে তাঁরা চলে আসেন ঢাকায়। ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করানো হয়।

একটা পাথর নিক্ষেপে বদলে গেল একটা পরিবারের জীবন। বাবা মারুফ আলমের কোলে বসে ছিল আজমির। পাশে তার মা লিনা আক্তার। একটু পরপরই ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন মা। ওদিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছিল, জীবনের হিসাবনিকাশ এভাবে বদলে যাবে, সেটা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি তিনি। শুধু তিনি কেন? কে তা ভাবতে পারে? 
সেদিনটা ছিল অন্য যেকোনো দিনের মতোই। মারুফ আলমের মা চিলাহাটি থেকে এসেছিলেন ছেলে–ছেলে বউয়ের কাছে সৈয়দপুরে। রাতে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ট্রেনে উঠেছিলেন মারুফ আলম আর আজমির। আজমির বাপের নেওটা। বাবাকে ছাড়তেই চায় না।

তাই দাদিকে চিলাহাটি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যাবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। মাত্র ৪৫ মিনিটে সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি পৌঁছে যাওয়া যায় এবং ফিরতি ট্রেন ধরলেই সৈয়দপুর। রাতে তিনবার যাওয়া-আসা করে ট্রেন। তাই বরাবরের মতো মাকে চিলাহাটিতে নামিয়ে একই ট্রেনেই ফিরছিলেন মারুফ। আজমিরকে নিয়ে বসেছিলেন মাঝের আসনে। 
ইস! যদি সৈয়দপুর পর্যন্ত সেই আসনেই বসে থাকতেন মারুফ! তাহলে এই দুর্ঘটনায় পড়ত না আজমির। তবে নিশ্চিত করেই বলা যায়, আজমিরের জায়গায় আহত হতেন অন্য কেউ। হতেনই, কারণ পাথরটা তো নিক্ষেপ করতই সে পাষণ্ডটা! ট্রেনের ভেতর কী ঘটল না ঘটল, তা থোড়াই কেয়ার করত সে!

ট্রেন চলছে ঝিকঝিক। কমে গেছে গতি। আর কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন থামবে সৈয়দপুর স্টেশনে। আজমিরকে নিয়ে নামবেন। কিন্তু সেটা আর হলো না। স্টেশনের কাছাকাছি ট্রেন চলে আসায় মাঝের আসন থেকে উঠে পড়লেন মারুফ, একটু একটু করে এগিয়ে গিয়ে থামলেন দরজার কাছে।

অকস্মাৎ একটা আওয়াজ! অকস্মাৎ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল দরজার কাছের জানালাটা। আর সেই জানালার কাচসহ ছুড়ে মারা পাথরটি লাগল আজমিরের চোখে! তারপরের ঘটনা আগেই বলা হয়েছে।

ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে আজমিরের চোখে অস্ত্রোপচার করেছেন কনসালট্যান্ট সালেহা সুলতানা পুষ্প। তিনি জানালেন, পুরো চোখটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাথর আর কাচ বের করে চোখ পরিষ্কার করা হয়েছে। কর্নিয়া জোড়া দেওয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহ পরে দেখতে হবে, রেটিনা ভালো আছে কি না। রেটিনা ঠিক থাকলে আজমির ওই ক্ষতিগ্রস্ত চোখ দিয়ে দেখতে পাবে।

ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে যখন আজমিরের মা-বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন কখনো আশাবাদী, কখনো ভেঙে পড়া দুজন মানুষকে দেখছিলাম। মা-বাবার চোখ থেকে কেন জল ঝরছে, তা বুঝতে পারছিল না আজমির। ওর মানসিক ট্রমা এখনো কাটেনি। কথা বলতে চাইলে ও তাকাল এবং খানিকটা হাসল। ওর মায়ের চোখের জল ও তখন দেখতেই পাচ্ছিল না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বগুড়ায় দুই মামলায় আ.লীগের ছয় নেতা-কর্মী ১০ দিনের রিমান্ডে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত