Ajker Patrika

পাগলীমার হাটে দিনে কোটি টাকার মরিচ বিক্রি

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২২, ১০: ২৩
পাগলীমার হাটে দিনে কোটি টাকার মরিচ বিক্রি

হাটের নাম পাগলীমার হাট। প্রতিদিন ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত সেখানে চলে মরিচ কেনাবেচা। এই হাটে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়, যার দাম গড়ে কোটি টাকার ওপরে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন মরিচ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মটুকপুর ইউনিয়নে পাগলীমার হাট বসে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের চাষিরা তাঁদের খেতের মরিচ নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি এসব এলাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসেছেন মরিচ কিনতে। শুধু মরিচ ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পাগলীমার হাট। এখানে রয়েছে অর্ধশতাধিক আড়ত।

জানা যায়, নীলফামারী জেলার উৎপাদিত মরিচের মান ভালো হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে এখানকার মরিচের কদর রয়েছে। এই হাটে বিন্দু মরিচ, সাপ্লাই মরিচ, ডেমা মরিচ, ডেমা হাইব্রিড মরিচ, জিরা মরিচসহ দেশি মরিচ পাওয়া যায়। তবে প্রকারভেদে এসব মরিচ প্রতিমণ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে কোনো কোনো দিন আমদানির তুলনায় চাহিদা বেশি হলে দাম একটু বেশি থাকে। 

হাটে আসা ডিমলার মরিচচাষি আমিনুর রহমান বলেন, ‘এবার মরিচের ফলন বাম্পার হলেও কিছু মরিচে পোকা ছিদ্র করেছে। এতে চিন্তায় রয়েছি। মরিচ চাষ করতে নিজেরাই স্থানীয় বাজারে কীটনাশকের দোকান থেকে বিষ কিনে খেতে স্প্রে করছি। কারণ কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়নি। তবে দাম ভালো ও মরিচের চাহিদা বেশি হওয়ায় অধিক মুনাফার আশা রয়েছে।’

জলঢাকার মরিচচাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি তিন বিঘা মাটিতে মরিচ চাষ করছি। মরিচে পোকার আক্রমণের কারণে প্রতি সপ্তাহে স্প্রে করতে হয়। এতে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত লাখখানিক টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, আরও ১ লাখ টাকার মতো মরিচ বিক্রি করতে পারব।’ 

সাতক্ষীরা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আজাহার আলী বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমি এই হাটে মরিচ কিনছি। হাট থেকে আমি বিভিন্ন জাতের মরিচ কিনে নিয়ে যাই। হাটে টাকা লেনদেন বা বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। অনেক সময় হাটে না এসেও ব্যাংকে টাকা পাঠিয়ে এখানকার আড়ত থেকে মরিচ কিনি। এসব সুবিধার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী এখান থেকে মরিচ কেনেন।’ 

পাগলীমার হাটের ইজারাদার রোমান কবির বলেন, ‘টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিলেও কৃষকদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি। এ ছাড়া বাইরে থেকে আসা পাইকারদের যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখি। যাতে তাঁরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারেন। একই সঙ্গে এই হাটের ওপর প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।’ 

হাটের আড়তদার সমিতির সভাপতি এনতাজুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, মরিচের মৌসুমে প্রতিদিন এই হাট বসে। এখানে ৮ থেকে ১০ হাজার মণ মরিচ কেনাবেচা হয়। এখানকার মরিচ সিরাজগঞ্জ, পাবনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। হাটটি উত্তরাঞ্চলে মরিচের জন্য বিখ্যাত। প্রায় ১৫ বছর ধরে এ হাটের মরিচ বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত আছি। আশপাশের কয়েকটি উপজেলার চাষিরা এখানে মরিচ বিক্রি করতে আসেন। 

এ বিষয়ে ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলায় এ বছর মরিচের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫০ হেক্টর। কিন্তু আমরা ৭৮০ হেক্টর অর্জন করেছি। এ বছর মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো যাচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।’ 

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ সময় মরিচের কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ফল ছিদ্রকারী একটি পোকা মরিচে আক্রমণ করে থাকে। পোকা দমনে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের ব্লকে যাঁরা আছেন তাঁরাও পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে যদি কৃষকেরা এমামেকটিন বেনজয়েট গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করেন, তাহলে বেশি উপকৃত হবেন। আমরা এই কীটনাশক এক সপ্তাহ পর পর ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত