Ajker Patrika

আশ্বাসেই কাটল ২৫ বছর, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। একটু এদিক সেদিক হলে নিশ্চিত দুর্ঘটনা। সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ও উলিপুরের বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে বাঁশের সাঁকো। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। একটু এদিক সেদিক হলে নিশ্চিত দুর্ঘটনা। সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ও উলিপুরের বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে বাঁশের সাঁকো। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চরখোর্দ্দা গ্রামের মো. আমজাদ হোসেন (৬২) বলেন, ‘এমপি আবদুল আজিজ, এমপি লিটন, এমপি গোলাম মোস্তফা, এমপি কর্নেল কাদের, এমপি ব্যারিস্টার শামীম এমনকি এমপি সাগর আপাও বলেছেন ব্রিজ করে দেবেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। শুধু আশ্বাসেই কেটে গেল ২৫ বছর।’ এই অভিযোগ শুধু তাঁর একার নয়—সেতুবিহীন কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ২০ গ্রামের লাখো মানুষ।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়ন ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে বাঁশের সাঁকো নিয়ে মানুষের মধ্যে এখন হতাশা বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর বিশ্বাস উঠে গেছে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর থেকে। তারা এখন আর আশ্বাস শুনতে চায় না।

তারাপুর ইউনিয়নের নামাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সাঁকো দিয়ে তারাপুর, ঘগোয়া, লাঠশালা, বৈরাগীপাড়া ছাড়াও উলিপুর উপজেলার বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের চরবিরহীম, সাধুয়া, দামারহাট, নাগড়াকুড়া, থেথরাসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ এই পথে চলাচল করেন। কিন্তু আশ্বাসের পর আশ্বাস, কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। একটু এদিক সেদিক হলে নিশ্চিত দুর্ঘটনা। সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ও উলিপুরের বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে বাঁশের সাঁকো। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। একটু এদিক সেদিক হলে নিশ্চিত দুর্ঘটনা। সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ও উলিপুরের বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে বাঁশের সাঁকো। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘগোয়া গ্রামের আবদুল মুত্তালেব মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সবাই এসে বলে সেতু করে দেবে, কিন্তু ভোট পেরোলেই আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।’

পথচারী বাবর আলী বলেন, ‘সাঁকো ভেঙে গেলে বা নদীতে পানি বাড়লে সাংবাদিক আসে, ছবি তোলে, বক্তব্য নেয়; কিন্তু সেতু হয় না। এখন তো সাংবাদিকদের ওপরও বিরক্ত হয়ে গেছি।’

সংযোগ সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো

সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়ন ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে একটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এটি ব্যবহার করে প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ চলাচল করে।

খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। একটু এদিক সেদিক হলে নিশ্চিত দুর্ঘটনা। সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ও উলিপুরের বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে বাঁশের সাঁকো। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। একটু এদিক সেদিক হলে নিশ্চিত দুর্ঘটনা। সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ও উলিপুরের বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে বাঁশের সাঁকো। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, একসময় এখানে ছিল বুড়াইল নদী, যার পাশ দিয়ে বয়ে যেত তিস্তা। ২০০১ সালের দিকে তিস্তার ধারা ভেঙে বুড়াইলে মিশে যায়। এরপর থেকেই নদীর প্রবাহ ও প্রস্থ বাড়তে থাকে এবং এটি এখন তিস্তার শাখা নদী হিসেবে পরিচিত। ফলে বাঁশের সাঁকোটি হয়ে ওঠে জীবনের ঝুঁকিতে চলাচলের একমাত্র ভরসা। বহুবার কাঠ ও বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হলেও তা টেকসই হয়নি। এরই মধ্যে সাঁকো থেকে পড়ে দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। নদীতে মোটরসাইকেলসহ পুলিশ সদস্য পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো নিয়মিতই ঘটে।

প্রতিবছর স্থানীয়দের উদ্যোগে দু-তিনবার সাঁকোটি মেরামত করা হয়, যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানান এলাকাবাসী।

প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি রয়ে গেছে ফাইলেই

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজের জন্য সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।’

উপজেলা প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমানও একই আশ্বাস দিয়েছেন, ‘বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’

তবে দীর্ঘদিন ধরে সেতুর দাবিতে আন্দোলন আর আশ্বাস শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। তারা চায়, এবার যেন কথার ফুলঝুরি নয়, বাস্তবেই একটি স্থায়ী ও টেকসই সেতু নির্মাণ হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনা যাঁকে ঢাকায় ‘হত্যা করলেন’, তিনি ময়মনসিংহে জীবিত!

নগদে স্ত্রীর চাকরি, স্বার্থের সংঘাতে জড়ালেন নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মুর্শেদ

জীবিত ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলায় সাক্ষীও দুই ভাই, নেপথ্যে যা জানা গেল

যুক্তরাষ্ট্রে সি চিন পিংয়ের মেয়েকে বহিষ্কারের দাবি, হঠাৎ কেন এই বিতর্ক

পেট্রল-অকটেন-ডিজেলের দাম কমল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত