Ajker Patrika

‘উন্নয়নের বাতি ফিউজ হয়্যা গেইছে বাহে’

শিপুল ইসলাম, রংপুর
‘উন্নয়নের বাতি ফিউজ হয়্যা গেইছে বাহে’

বাহে, উন্নয়নের বাতি ফিউজ হয়্যা গেইছে, দিনে রাইতে ১৫ ঘণ্টা কারেন্ট থাকোছে না। মরণ গরমোত হামার ফ্যান চলোছে না, হাতপাখার বাতাসে গাও জুড়ায় না। সারা রাইত চেতন থাকি সকালে কৃষাণী করিবার পারুছি না। আর কদ্দিন এইংক্যা করি চলবার নাগবে। জীবন আর বাঁচোছে না। কদ্দিন যে শোননো কারেন্ট ফেরি করি বেচাইবে, এ্যালা কেন তাক থাকুছে না।

ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে আক্ষেপ করে ইকরচালী বাজারে কথাগুলো বলছিলেন তারাগঞ্জের ইকরচালী গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়ার।

রংপুর নগরীর শাহিপাড়া গ্রামের রুকন মিয়ার চার ছেলে মেয়ে। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে সংসার চালান তিনি। আগে সারা দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে গাড়িতে ঠিকমতো চার্জ করাতে না পারায় এখন সেই আয় ঠেকেছে ৩০০-৪০০ টাকায়। এ টাকায় ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সংসার চালাতে খাচ্ছেন হিমশিম।

রুকন মিয়া বলেন, ‘ভাই, না পাওছি ঠিকমতো ঘুমবার, না পাওছি খাবার। কামাই তো নাই। সারা দিনে রাইতে মিলে অর্ধেকও চার্জ হয় না। খুব কষ্টে বাঁচি আছি।’ 

ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রংপুরের মানুষের জনজীবন। শহরে সারা দিনে প্রায় ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকছে না। আর গ্রামে থাকছে না ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। বিশেষ করে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকায় ঘুমাতে পারছে না মানুষ। এতে স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। কমছে কর্মঘণ্টাও। লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন পোলট্রি খামারিরা।

নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র বলছে, রাতের বেলায় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় এ লোডশেডিং বেড়েছে। দিনের বেলায়ও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। এটি জাতীয় সমস্যা। 

ইকরচালীর লেদ মেকানিক মহুবার হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল তো ঠিকই, কারেন্ট কেন পাওছি না। কারেন্ট না থাকায় ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছি না। বসে রেখে ৫ জন কর্মচারীকে বেতন দিচ্ছে হচ্ছে।’ 

চার মাসের কোলের শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় বামনদীঘি বাজারে কথা হয় হাড়িয়ারকুঠির গৃহবধূ মন্নুজা বেগমের সঙ্গে। গরমে ঘাম বসে গিয়ে তাঁর শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে জানিয়ে মন্নুজা বলেন, ‘রাইতোত দুই ঘণ্টাও কারেন্ট থাকোছে না। ১১টার সময় যায় আর ভোর ৫টায় আইসে। সারাইত শরীর দিয়া ঝরির মতোন ঘাম পড়ে ঘুম হয় না। কোলার ছাওয়াটা ঘামতে ঘামতে অসুস্থ হয়া গেইছে। হাসপাতাল নেওছুন।’

নেসকোর রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘রংপুর বিভাগে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নেসকো ও পিবিএসর ৯০৪ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৬৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়েছে। লোডশেডিং ছিল ২৩৭ মেগাওয়াট। রাতের বেলা কুইক রেন্টালগুলো বন্ধ থাকায় সে সময় একটু লোডশেডিং বৃদ্ধি পায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত