Ajker Patrika

বিদ্যালয়ের ৭ শ্রেণিকক্ষে চলে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

‘বিদ্যালয়ে মোট শ্রেণিকক্ষ ছিল ১৩ টি। প্রায় পাঁচ বছর আগে ৬টি কক্ষ ভেঙে দিয়ে আরেকটি ভবন নির্মাণের জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে বাকি ৭টি কক্ষ দিয়ে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান চালিয়ে নিচ্ছি। শুরুর দিকে ২ শিফটেও ক্লাস চালিয়েছি। এখন আর পারছি না। খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।’ এসব কথা বলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর আলহাজ্ব তহুরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (এটিএন) প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রাজ্জাক রাজা। 

প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল দেড় বছরের মধ্যে। পাঁচ বছরেও এই কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার। এ নিয়ে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি অনেকবার। কোনো কাজ হয়নি। আমি ব্যর্থ এবং তাঁদের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ।’ 

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিতাই চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘চারতলা ভবনের কক্ষসহ প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ হয়েছে। অনেক দিন ধরে ঠিকাদারের লোকজন আর কাজ করছেন না। ভবনের বাকি কাজটুকু না হওয়ায় কাটছে না শ্রেণিকক্ষের সংকট সমস্যা। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। ফলে চরম বিপাকে পড়েছি শিক্ষক-কর্মচারীসহ ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে।’ 

মোছা. মুবাশ্বিরা ইসলাম মৌ নামের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘এবারে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম। ভবনের কাজ শুরু হওয়ায় শ্রেণিকক্ষ কম ছিল। ছয়জন করে বসতাম এক বেঞ্চে। গাদাগাদি হতো। চিল্লাপাল্লা হতো। ঠিকমতো স্যারদের কথা শোনা যেতো না। লিখতেও সমস্যা হতো। খেলাধুলাও করতে পারিনি কোনো দিন। ৫টি বছর এভাবেই কেটেছে স্কুল জীবনে। মনে হলে ভীষণ কষ্ট লাগে।’ 

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যালয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে চারতলা ভবনের বরাদ্দ পায়। নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা আছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫৩ টাকা। কাজ পেয়েছে রংপুরের নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার এম এস অথৈই এন্টারপ্রাইজ। ২০১৯ সালের ৩০ মে ছিল কাজ শুরুর তারিখ। শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া ছিল ১৮ মাস। কিন্তু ৫৮ মাস পার হলেও ভবনের কাজ শেষ হয়নি। এই কারণে শ্রেণিকক্ষ-সংকট লেগেই আছে সেই থেকে। বন্ধ আছে খেলাধুলাও। ৫ বছর ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। 

বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে কাজ করতে থাকা গাইবান্ধার রকি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কাজটি মূলত এম এস অথৈই এন্টারপ্রাইজ পায়। আমি কিনে নিয়ে করছি।’ নির্মাণকাজে অনেক দেরি হয়েছে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বঙ্গ ও নিউ মার্কেটে আমার দোকান ছিল। সেগুলো আগুনে পুড়ে যায়। সেখানে অনেক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এ কারণে দেরি হয়েছে।’ দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার আশ্বাস দেন ঠিকাদার মো. জাহাঙ্গীর আলম। 

কাজটি দেরিতে হচ্ছে বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শাহজাহান সরকার বলেন, ‘সময়মতো কাজটি শেষ করতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সম্ভব হয়নি। অনেকবার চিঠিও দিয়েছি ঠিকাদারকে। আমরাও তাঁর ব্যবহারে ক্ষুব্ধ।’ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এই প্রকৌশলী। 

জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. বেলাল আহমেদ বলেন, ‘ঠিকাদারের আর্থিক কিছু সমস্যা ছিল। মাঝখানে আবার করোনা এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর কারণে দেরি হচ্ছে। তবে কথা হয়েছে ঠিকাদারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে তিনি কাজ শেষ করে দিতে চেয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত