জয়পুরহাট প্রতিনিধি
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়ে যায় শারমিন আক্তার সুমির। কিন্তু বাবা রিকশাচালক বলে তিন মাসের মাথায় বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর পড়াশোনায় জিদ চেপে বসে সুমির। ঘরে বসে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নেন। পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কয়তাহার গ্রামের রিকশা চালক গোলাম মোস্তফার মেয়ে শারমিন আক্তার সুমি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সুমি সদ্য প্রকাশিত এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৭ দশমিক ৫ মেধা স্কোর নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৮ মে তাঁকে ভর্তি হতে হবে।
সুমির মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার খবরে তাঁর রিকশাচালক পিতা গোলাম মোস্তফা এবং গৃহিণী মা তহমিনা বেগম বেশ উৎফুল্ল। পাশাপাশি দুশ্চিন্তায়ও পড়েছিলেন। কিন্তু মেয়েকে সে কথা বুঝতে দেননি। সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও মেয়েকে পড়াবেন বলে জানান।
এর পেছনে বাবা-মায়ের একটা অপরাধবোধও আছে। অভাব অনটনের কারণে একটি অবস্থাপন্ন ঘর দেখে সুমিকে বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সেটা ছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। কিন্তু বাবা রিকশাচালক বলে তিন মাসও টেকেনি সেই বিয়ে। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই তাঁকে তালাক দেওয়া হয়।
কিন্তু দমে যাননি সুমি। তিনি আবার জোর দেন লেখাপড়ায়। স্কুলজীবন থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল সুমির। সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কখনো দ্বিতীয় হননি। এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে স্কলারশিপ পান।
এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলেন। ভয়ে ভয়ে বাড়িতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু জিপিএ ৫ পেয়েই উত্তীর্ণ হন। এবার মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। কারও সাহায্য ছাড়া বাড়িতেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন সুমি। কঠোর পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৫ এপ্রিল ভর্তির ফল প্রকাশের পর বাড়িতে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি এবং পড়ালেখার খরচ জোগানোর কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েন সুমি। এ অবস্থায় দরিদ্র বাবা-মা তাঁকে সাহস জোগান এই বলে যে, বসতবাড়ির ১০ শতক এবং ৩৯ শতক আবাদি জমির সবটুকু বিক্রি করে হলেও তাঁকে ডাক্তারি পড়ানো হবে। কিন্তু তাঁর পড়ালেখার জন্য বাবার জায়গা জমি বিক্রি করতে হবে এটা ভেবেই মনে কষ্ট পান সুমি।
বিষয়টি এলাকার লোকজনের মধ্যেও জানাজানি হয়। গত ১১ এপ্রিল সুমিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন জনৈক হিতৈষী। এর পরপরই তাঁর মেডিকেলে ভর্তি এবং লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সহযোগিতার আশ্বাস আসছে।
জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু প্রতিনিধি পাঠিয়ে সুমির মেডিকেলে ভর্তি থেকে শুরু করে লেখাপড়ার সার্বিক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সুমিকে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
এ ছাড়া সুমির বাবার বিকাশ অ্যাকাউন্টে নগদ আর্থিক সহযোগিতা আসছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হক সুমিকে সহযোগিতা করবেন বলে তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন।
সুমির বাবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির জন্য চান্স পাওয়ায় খুব খুশি হলেও দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর আশ্বাসে, এখন খুব ভালো লাগছে। এ জন্য আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া।’
সুমি বলেন, ‘মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবর পেয়ে আনন্দের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু বাবা-মা আমাকে আশ্বস্ত করেন, আমাদের সব বিক্রি করে হলেও তোমাকে ডাক্তারি পড়াব। তবে এ কথা শোনার পরেও মন খুব খারাপ ছিল। কেননা, আমার জন্যই বাবা-মাকে সংসারে শেষ সম্বল জমিটুকু এবং বসত-বাড়ি বিক্রি করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন মহল থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পাচ্ছি। যা আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য সহায়ক হবে। এ জন্য আলহামদুলিল্লাহ।’
এই সম্পর্কিত পড়ুন:
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়ে যায় শারমিন আক্তার সুমির। কিন্তু বাবা রিকশাচালক বলে তিন মাসের মাথায় বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর পড়াশোনায় জিদ চেপে বসে সুমির। ঘরে বসে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নেন। পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কয়তাহার গ্রামের রিকশা চালক গোলাম মোস্তফার মেয়ে শারমিন আক্তার সুমি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সুমি সদ্য প্রকাশিত এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৭ দশমিক ৫ মেধা স্কোর নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৮ মে তাঁকে ভর্তি হতে হবে।
সুমির মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার খবরে তাঁর রিকশাচালক পিতা গোলাম মোস্তফা এবং গৃহিণী মা তহমিনা বেগম বেশ উৎফুল্ল। পাশাপাশি দুশ্চিন্তায়ও পড়েছিলেন। কিন্তু মেয়েকে সে কথা বুঝতে দেননি। সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও মেয়েকে পড়াবেন বলে জানান।
এর পেছনে বাবা-মায়ের একটা অপরাধবোধও আছে। অভাব অনটনের কারণে একটি অবস্থাপন্ন ঘর দেখে সুমিকে বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সেটা ছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। কিন্তু বাবা রিকশাচালক বলে তিন মাসও টেকেনি সেই বিয়ে। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই তাঁকে তালাক দেওয়া হয়।
কিন্তু দমে যাননি সুমি। তিনি আবার জোর দেন লেখাপড়ায়। স্কুলজীবন থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল সুমির। সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কখনো দ্বিতীয় হননি। এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে স্কলারশিপ পান।
এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলেন। ভয়ে ভয়ে বাড়িতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু জিপিএ ৫ পেয়েই উত্তীর্ণ হন। এবার মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। কারও সাহায্য ছাড়া বাড়িতেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন সুমি। কঠোর পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৫ এপ্রিল ভর্তির ফল প্রকাশের পর বাড়িতে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি এবং পড়ালেখার খরচ জোগানোর কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েন সুমি। এ অবস্থায় দরিদ্র বাবা-মা তাঁকে সাহস জোগান এই বলে যে, বসতবাড়ির ১০ শতক এবং ৩৯ শতক আবাদি জমির সবটুকু বিক্রি করে হলেও তাঁকে ডাক্তারি পড়ানো হবে। কিন্তু তাঁর পড়ালেখার জন্য বাবার জায়গা জমি বিক্রি করতে হবে এটা ভেবেই মনে কষ্ট পান সুমি।
বিষয়টি এলাকার লোকজনের মধ্যেও জানাজানি হয়। গত ১১ এপ্রিল সুমিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন জনৈক হিতৈষী। এর পরপরই তাঁর মেডিকেলে ভর্তি এবং লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সহযোগিতার আশ্বাস আসছে।
জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু প্রতিনিধি পাঠিয়ে সুমির মেডিকেলে ভর্তি থেকে শুরু করে লেখাপড়ার সার্বিক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সুমিকে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
এ ছাড়া সুমির বাবার বিকাশ অ্যাকাউন্টে নগদ আর্থিক সহযোগিতা আসছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হক সুমিকে সহযোগিতা করবেন বলে তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন।
সুমির বাবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির জন্য চান্স পাওয়ায় খুব খুশি হলেও দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর আশ্বাসে, এখন খুব ভালো লাগছে। এ জন্য আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া।’
সুমি বলেন, ‘মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবর পেয়ে আনন্দের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু বাবা-মা আমাকে আশ্বস্ত করেন, আমাদের সব বিক্রি করে হলেও তোমাকে ডাক্তারি পড়াব। তবে এ কথা শোনার পরেও মন খুব খারাপ ছিল। কেননা, আমার জন্যই বাবা-মাকে সংসারে শেষ সম্বল জমিটুকু এবং বসত-বাড়ি বিক্রি করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন মহল থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পাচ্ছি। যা আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য সহায়ক হবে। এ জন্য আলহামদুলিল্লাহ।’
এই সম্পর্কিত পড়ুন:
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে দুই ভারতীয় নাগরিককে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
৬ মিনিট আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হোমনা উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. সাকিব ও সদস্যসচিব মো. ইয়াছিন এ দুই কমিটির অনুমোদন দেন।
১৩ মিনিট আগেপাবনার ঈশ্বরদীতে দুই শিশুসন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের আসনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
১৯ মিনিট আগেনারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি। মাকসুদ হোসেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আজ বুধবার বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন
৩২ মিনিট আগে