Ajker Patrika

৩ বছরের মেয়েকে একা করে‍ চলে গেলেন শিক্ষক জান্নাতুন

মান্দা ও নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
৩ বছরের মেয়েকে একা করে‍ চলে গেলেন শিক্ষক জান্নাতুন

প্রশিক্ষণে যাবেন বলে তিন বছরের মেয়েকে বাসায় রেখে বিদায় নিয়ে বের হয়েছিলেন শিক্ষক জান্নাতুন ফেরদৌস। তবে তিনি আর ফেরেননি। আজ শুক্রবার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের বলিহার এলাকায় ট্রাকচাপায় সিএনজি অটোরিকশার চালকসহ পাঁচজন নিহত হন। নিহতদের চারজন ছিলেন শিক্ষক। এর মধ্যে জান্নাতুনও ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

জান্নাতুন ফেরদৌসের বাবা আব্দুল গফুর বলেন, ‘সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে তিন বছরের নাতনি জুয়াইরিয়াকে আমার কোলে দিয়ে দেখে রাখতে বলেছিল জান্নাতুন। একই সঙ্গে দোয়া চেয়ে বলেছিল, প্রশিক্ষণ শেষে যেন সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পারে। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে আমাদের কাঁদিয়ে এভাবে চলে যাবে ভাবতেও পারছি না।’ 

একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন জান্নাতুনের চাচাতো বোনের স্বামী শিক্ষক মকবুল হোসেন এবং আহত হয়েছেন জান্নাতুনের বোন শিক্ষক নুরজাহান বেগম (৩০)। পুরো পরিবারই আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। 

জান্নাতুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহত জান্নাতুনের তিন বছর বয়সী মেয়ে জুয়াইরিয়াকে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন নানা আব্দুল গফুর। নানার কোলে বসে জুয়াইরিয়া আপন মনে মোবাইল নাড়াচাড়া করছে। জুয়াইরিয়া বুঝতেও পারছে না তার মা তাকে ছেড়ে চিরতরের জন্য বিদায় নিয়েছে। 

নিহত জান্নাতুনের ভাই আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৫ বছর আগে উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে জান্নাতুনের বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। ২০২১ সালে এনটিআরসির মাধ্যমে গুজিশহর উচ্চবিদ্যালয়ে বোনের চাকরি হয়। সেই থেকে আমাদের বাড়িতে থেকেই চাকরি করত। আমরা তাঁকে খুব স্নেহ করতাম। সেই আদরের বোন আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যাবে কল্পনাও করতে পারছি না।’ 

আতাউর রহমান আরও বলেন, ‘এক বোন মারা গেলেন, আরেক বোন স্বামীহারা হলেন। অন্যজন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এ শোক প্রকাশ করার ভাষা আমাদের জানা নেই।’ 

নিহত জান্নাতুনের প্রতিবেশী ফেন্সি আক্তার বলেন, ‘অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলেন জান্নাতুন। কারোর সঙ্গে দ্বন্দ্ব কলহ করতেন না। সবাইকে একইভাবে ভালোবাসতেন। সবাইকে কাঁদিয়ে এভাবে চলে যাবেন ভাবতেও কষ্ট লাগছে।’ 

নিহত মকবুল হোসেনের শ্যালক জাহিদ হাসান জানান, বোন রমিছা বেগমকে প্রায় ২৫ বছর আগে উপজেলা সদরের বিজলী গ্রামের মকবুল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বোনকে স্বামীহারা ও সন্তানকে এতিম করে দুলাভাই এভাবে চলে যাবে ভাবতে কষ্ট লাগছে। 

উল্লেখ্য, আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের বলিহার বাবলাতলি এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলেন-নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পানিহারা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন (৪৮), বেলকাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মকবুল হোসেন (৫৮), রামকুড়া আশরাফুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক লেলিন সরকার (২৭), গুজিশহর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন ফেরদৌস (৩৫), সিএনজি চালক সেলিম রেজা (৪২)। গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষক নুরজাহান বেগম (৩০) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত