Ajker Patrika

ইউপি কার্যালয়ে ধর্ষণের সালিস, ৫১ হাজার টাকায় নিষ্পত্তির অভিযোগ 

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
ইউপি কার্যালয়ে ধর্ষণের সালিস, ৫১ হাজার টাকায় নিষ্পত্তির অভিযোগ 

নওগাঁর মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়ন পরিষদে সালিসের মাধ্যমে ৫১ হাজার টাকায় ধর্ষণের একটি ঘটনা নিষ্পত্তি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে চেয়ারম্যানের কক্ষে এ সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

সালিসের আয়োজন করেন কশব ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল জব্বার। এতে সভাপতিত্ব করেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। তবে জরিমানার টাকা এখনো পর্যন্ত ভুক্তভোগী নারীর হাতে পৌঁছায়নি। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

স্থানীয়রা জানান, মামুনুল ইসলাম মামনুর নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত রোববার মান্দা থানায় এজাহার দেন ভুক্তভোগী এক নারী। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মান্দা থানার উপপরিদর্শক অর্জুন কুমার। এরপর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে অভিযুক্ত যুবকের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন মহলে তদবির শুরু করেন। এখনো পর্যন্ত ভুক্তভোগী নারীর মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপরতা শুরু করেন স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল জব্বার। তাঁর নেতৃত্বে গতকাল মঙ্গলবার রাতে তারাবির নামাজের পর কশব ইউনিয়ন পরিষদে সালিসের আয়োজন করা হয়। সালিসে সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যানে ফজলুর রহমান। 

বৈঠকে আরেক ইউপি সদস্য বুলবুল হোসেন ওরফে বুলু মেম্বার, মোজাফফর মাস্টার, আব্দুর রহিম, আব্দুস সালামসহ অভিযুক্ত যুবকের পক্ষে অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ধর্ষিতার ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫১ হাজার টাকা। 

ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেন বলেন, ‘স্থানীয় মেম্বার ও মাতবরদের চাপের মুখে সালিসে উপস্থিত হয়েছিলাম। বৈঠকে আমার কথা আমলে না নিয়ে সবাই মামুনুলের পক্ষে কথা বলেছেন। চেয়ারম্যান জরিমানার যে রায় দিয়েছেন সেই টাকাও আমাকে দেওয়া হয়নি। আমাকে বিচার পাইয়ে দেওয়া কথা বলে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। আমি ন্যায় বিচার দাবি করছি।’ 

ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে সালিস করা হয়েছে। সালিসে ৫১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা মেম্বার আব্দুল জব্বারের কাছে জমা আছে।’ 

ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য সবাই চাপাচাপি করেছে। তাই চেয়ারম্যানকে নিয়ে নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা আমার হেফাজতে রয়েছে।’ 

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি এজাহার পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপপরিদর্শক অর্জুন কুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ 
 
সালিসের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা নিষ্পত্তি করা যায় কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এটি সালিসযোগ্য বিষয় নয়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত