Ajker Patrika

বাগাতিপাড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শাঁখা কারিগরেরা

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ২১
Thumbnail image

নাটোরের বাগাতিপাড়ার ঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্পের কারিগরেরা এখন শাঁখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিবছর দুর্গাপূজায় শাঁখার চাহিদা বাড়ে। গত বছর দুর্গাপূজায় করোনার সংক্রমণ ছিল বেশি। সে তুলনায় এ বছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় শাঁখার বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন কারিগরেরা। 

এ বিষয়ে শাঁখা কারিগরেরা বলেন, 'উপজেলার জামনগর ইউনিয়নে সবুজ বৃক্ষরাজিতে ঘেরা শাঁখাপল্লি। এরা বণিক সম্প্রদায়ের। এই পল্লির শতাধিক পরিবার পৈতৃক ব্যবসা শাঁখাশিল্পের সঙ্গে জড়িত। শাঁখা তৈরির মূল উপকরণ হলো শঙ্খ, যা হচ্ছে শামুক প্রজাতি। আর এদের জন্ম সমুদ্রের তলদেশে। বাংলাদেশ সাধারণত ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে এই শাঁখা তৈরির উপকরণ শঙ্খ আমদানি করে।' 

পুরুষ কারিগরেরা আমদানি করা এই শঙ্খ মেশিনে কেটে বালা ও আংটিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন। পরে নারী শিল্পীরা নিপুণ হাতে এগুলোর ওপর কারুকার্য করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শঙ্খ বা শাঁখাসামগ্রী বেশি ব্যবহার করে থাকেন। হিন্দু নারীদের বিয়ের সময় শাঁখার বালা পরিয়ে দেওয়া হয়।

শাঁখা তৈরিতে ব্যস্ত এক কারিগরআবার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শঙ্খের মাধ্যমে সুমধুর সুর সৃষ্টি করে পূজা-পার্বণের কার্যক্রম শুরু করেন। পল্লির নববধূ ও কিশোরীরা মুখের দাগ দূরীকরণে শাঁখার গুঁড়ো কচি ডাবের পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করেন। এ ছাড়া কসমেটিকস তৈরিতে শাঁখার গুঁড়ো ব্যবহৃত হয়। 

এ বিষয়ে শাঁখা কারিগর বসু চন্দ্র সেন বলেন, 'করোনা ভাইরাসের কারণে শাঁখাশিল্পের চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা বর্তমানে কিছুটা স্বাভাবিক। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে শাঁখাসামগ্রীর কদর কিছুটা বাড়ছে। তাই এই শাঁখাপল্লির সবাই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।' 

কারিগর স্মৃতি রানী সেন বলেন, 'তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই বংশানুক্রমে শাঁখাশিল্পের সঙ্গে জড়িত। শাঁখাসামগ্রী তৈরি ও কারুকার্য করেই তাঁরা সংসার চালান। প্রতিদিন গড়ে এক হালা, অর্থাৎ ৫০ জোড়া বালার ওপর সুনিপুণ কারুকার্য করেন। প্রতি জোড়া বালার কারুকার্যে ১০ টাকা মজুরি পান। এতে তাঁদের প্রতিদিন আয় হয় ৫০০ টাকা, যা দিয়ে ভালোভাবেই চলছে তাঁদের সংসার।'

শাঁখা পল্লিতে শাঁখা ক্রমানুসারে সাজাচ্ছেন এক কারিগরশাঁখা ব্যবসায়ী পরিমল চন্দ্র ধর বলেন, 'জামনগর শাঁখাপল্লির শাঁখা প্রায় সারা দেশেই বিক্রি হয়। এই পল্লির শাঁখাপণ্য ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পাইকারিভাবে বিক্রি করা হয়। আর দুর্গাপূজা সামনে রেখে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার শাঁখাপণ্য বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।' 

জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস বলেন, 'করোনার সংকট মোকাবিলায় শাঁখাশিল্পে সম্পৃক্তদের আর্থিক ও খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এই শিল্পে এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। আর এই শাঁখাশিল্পে অনেকের কর্মসংস্থান হওয়ায় তা টিকিয়ে রাখতে পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।' 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল বলেন, 'জামনগর শাঁখাপল্লিকে ঘিরে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময়ই তাঁদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।'  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত