নেজামপুরে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার হতে চান ৪ আত্মীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নেজামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার (ইউপি) সদস্য হতে চান দুই পরিবারের ৪ নিকট আত্মীয়। এক পরিবারে রয়েছে চাচা-ভাতিজা, আরেক পরিবারে জামাই-শ্বশুর। দুইটি পরিবার থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এই ৪ প্রার্থী। চাচা ও শ্বশুর দীর্ঘদিনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। বাকি দুজন ভাতিজা ও জামাই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

প্রার্থীরা হলেন-গোসাইপুর গ্রামের মৃত আলবক্স মণ্ডলের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য মো. আব্দুল খালেক ফিটু (৬০), তাঁর ভাতিজা সাফিউল আলম সেলিম (৩৮), কাজলকেশর গ্রামের মৃত ইসমাইল মণ্ডলের ছেলে বর্তমান ইউপি সদস্য তোসলিম উদ্দীন (৫০) এবং তাঁর আপন ভাইয়ের জামাই মো. আলী হোসেন (৪২)।

জানা যায়, কাজকেশর, গোসাইপুর, টিকইল, হরিরাপুর এই চারটি গ্রাম নিয়ে গঠিত নিজামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের মোট ভোটার ১ হাজার ৮৩৫ জন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলার ৪টি করে মোট ৮টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

ভোটে অংশ নেওয়া চারজনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। চাচা-ভাতিজার বাড়ি একই গ্রামে। আবার জামাই-শ্বশুরের বাড়িও একই গ্রামে। তাঁদের মধ্যে চাচা আব্দুল খালেক ফিটু ১৪ বছর এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন। পেশায় কৃষি কাজ করেন তিনি। আব্দুল খালেক ফিটু নাচোল উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মোরগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুল খালেক ফিটু। তাঁর আপন ভাতিজা সাফিউল আলম সেলিমের প্রতীক টিউবওয়েল। তিনি এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। চাচার বিরুদ্ধে ভোটে অংশ নিলেও চাচার মতোই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। 

এদিকে, কাজলকেশর গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য তোসলিম উদ্দীন টানা ১১ বছর ধরে এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। প্রথমবার পরাজিত হলেও পরের দুইবার নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। এবার তিনি ফুটবল প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন। তাঁর জামাই আলী হোসেন এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর প্রতীক বৈদ্যুতিক পাখা।

স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব তরিকুল ইসলাম বলেন, চাচা-ভাতিজা, জামাই-শ্বশুর ভোটে দাঁড়ালেও এখন পর্যন্ত কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সবাই নিজেদের মতো প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। জমজমাট একটা লড়াই হবে বলে আমরা আশা করছি। কারণ ৪ জনের মধ্যে দুজন নতুন মুখ ও দুজন দীর্ঘদিনের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। জনগণ নতুন কারও ওপর নাকি, পুরোনো কারও ওপর ভরসা রাখে তা ২৬ ডিসেম্বর ভোটের দিন দেখা যাবে। 

চায়ের দোকানদার সাদিকুল ইসলাম বলেন, ভোটের চাইতে চাচা-ভাতিজা, জামাই-শ্বশুর নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। একটি পরিবারে এমন হলে সাধারণত সমালোচনা হয়। কিন্তু যেহেতু দুটি পরিবারে এমন ঘটনা তাই যোগ্যতা-অযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করছে ভোটাররা। এখন পর্যন্ত আমাদের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। 

সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক ফিটু বলেন, আমার একমাত্র ভাইয়ের ছেলে সাফিউল আলম সেলিম। পারিবারিকভাবে কয়েকবার আলোচনায় বসে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সে জানিয়েছে নির্বাচন করবেই। যেহেতু কথা শোনেনি তাই আর কিছু বলতে যাইনি। তবে এ নিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক খারাপও হয়নি। সে তাঁর মতো কাজ করছে আর আমি আমার মতো নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। জয়-পরাজয়ের সিদ্ধান্ত দেবে জনগণ। 

বর্তমান ইউপি সদস্য শ্বশুর তোসলিম উদ্দিন বলেন, টানা ১১ বছর ধরে আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবা করে আসছি। এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা সেতু, কালভার্ট নির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করছি। এ ছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ ভূমিকা নিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে জনগণ ইনশাল্লাহ আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করবেন। 

একই গ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জামাইকে নিয়ে তোসলিম উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে আলী হোসেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সম্পর্কে সে আমার জামাই। সে আমার আপন ভাতিজির স্বামী। নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে পারিবারিক সম্পর্কে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। ২৬ ডিসেম্বর জনগণের দেওয়া রায় মেনে নিব। 

জামাই আলী হোসেন বলেন, জনগণ নতুন কাউকে চায়। জনগণের সেই চাহিদা থেকে আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। একই গ্রামে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমার শ্বশুর। আমার বাড়ি থেকে তাঁর বাড়ি দেখা যায়। এত অল্প দূরত্বে আমাদের বাড়ি তবুও পারিবারিক সম্পর্ক খুব ভালো রয়েছে। আশা করি নির্বাচনের পরেও তা অটুট থাকবে।