Ajker Patrika

অফিসে টাকার ছড়াছড়ি, চুরি হলেই সুইপার বিজয় হেলাকে দোষারোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
অফিসে টাকার ছড়াছড়ি, চুরি হলেই সুইপার বিজয় হেলাকে দোষারোপ

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রাজশাহীর কয়েকজন কর্মকর্তার দপ্তরে টাকার ছড়াছড়ি। তাঁদের ড্রয়ারে ড্রয়ারে নাকি টাকা। আর এ টাকা চুরি হলেই দোষ পড়ে বিজয় হেলা নামের এক সুইপারের ওপর। বিজয় এক যুগের বেশি সময় ধরে অফিসটিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করতেন। চুরির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর আগে কিস্তিতে কেনা বিজয় হেলার মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেওয়া হয়।

বিজয় হেলার মা এবং খালাও এই অফিসে সুইপারের কাজ করেন। বিজয় সওজের রাজশাহীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সড়ক উপবিভাগ-১ ও ২ শাখায় সুইপারের কাজ করতেন। বিজয় হেলার অভিযোগ, যে কর্মকর্তার অফিস তিনি ঝাড়ু দেন না, সেই অফিসে টাকা চুরি হলেও তাঁর ওপর দোষ চাপানো হয়। একবার টাকা চুরি হলে তাঁকে এবং তাঁর মা ও খালাকে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে ১৪ হাজার টাকা আদায় করা হয়। সবশেষ গত ২২ আগস্ট উপসহকারী প্রকৌশলী প্রণব কুমার দাসের কক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার পর চাকরিচ্যুত করা হয়। অথচ বিজয় চুরি করেছেন এমন প্রমাণ নেই।

বিজয় হেলা বলেন, রোজ সকালে অফিসের পিয়ন তালা খুলে দিলে তিনি প্রণব কুমারের অফিস ঝাড়ু দিতেন। ২২ আগস্টও একইভাবে কক্ষটি ঝাড়ু দিয়ে চলে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে প্রণব কুমার তাঁকে ডাকেন। তিনি গেলে প্রণব পিয়নকে বলেন, ‘এই দড়ি আন। গেট লাগা। একে বেঁধে ফেল।’ এরপর প্রণব তাঁকে বলেন, ‘তুই অফিস থেকে ১ লাখ টাকা চুরি করেছিস।’ বিজয় তা অস্বীকার করলে তাঁকে স্বীকার করে নেওয়ার জন্য দুপুর পর্যন্ত অফিসে বসিয়ে রেখে চাপ দেওয়া হয়। পরে তাঁর মোবাইল ফোন রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আবদুল মান্নাফ আকন্দ সুইপার বিজয়কে ডেকে বলেন, এখন থেকে তাঁর অফিসে আসার দরকার নেই। তাঁর চাকরি নেই।

বিজয় আরও বলেন, চুরির অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হলেও কর্মকর্তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। প্রায় তিন বছর আগে হিসাব শাখা থেকে ১৪ হাজার টাকা চুরি হয়। ওই ঘটনার দায়ও চাপানো হয় তাঁর ওপর। টাকা না দিলে তাঁকে এবং তাঁর মা ও খালাকে চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখানো হয়। তিনজনের চাকরি হারানোর ভয়ে বিজয়ের মা ধার করে ১৪ হাজার টাকা এনে দেন। এরপর থেকে যে কর্মকর্তার রুমেই টাকা চুরি হোক, বিজয়কেই দোষারোপ করা হয়।

বিজয় বলেন, সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের অফিস থেকেও ৭৫ হাজার টাকা চুরি হয়েছে বলে কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছেন। এ টাকাও বিজয় চুরি করেছে বলে কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন। অথচ বিজয় ওই কর্মকর্তার কক্ষ ঝাড়ু দেন না। বিজয়ের দাবি, অন্য কেউ চুরি করেছে। যেহেতু চাকরি হারানোর ভয়ে একবার তাঁর মা টাকা দিয়েছেন, তাই এখন যেখানেই চুরি হয়, এর দায় চাপানো হয় বিজয়ের ওপর। অথচ এর কোনো প্রমাণ নেই।

সওজ শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা বলেন, অন্যায়ভাবে বিজয় হেলাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। উপসহকারী প্রকৌশলী প্রণব কুমার দাস অভিযোগ তোলেন যে, তাঁর টাকা চুরি করে বিজয় মোবাইল কিনেছে। এ জন্য তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিজয় দাবি করেন, ১৫ হাজার টাকা কিস্তিতে তিনি এই ফোন কিনেছেন। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা এর প্রমাণও দেখিয়েছেন। তারপরও মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়া হয়নি। চুরির প্রমাণ না থাকলে বিজয়কে চাকরিচ্যুত না করার দাবি জানান তিনি। শ্রমিক ইউনিয়নের এই নেতা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নেন কর্মকর্তারা। তাই তাঁদের অফিসে টাকা থাকে।

উপসহকারী প্রকৌশলী প্রণব কুমার দাস স্বীকার করেন, বিজয়ই যে টাকা চুরি করেছে তার প্রমাণ নেই। তারা তাকে সন্দেহ করছে। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। অফিসে ঘুষের টাকা রাখার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে আমি কথা বলব না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আবদুল মান্নাফ আকন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা বিজয়ের স্থায়ী চাকরি ছিল না। মাস্টাররোলে কাজ করাতাম। সবার মতামতের ভিত্তিতে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ বিজয়ের টাকা চুরির কী প্রমাণ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে রকম প্রমাণ নেই। সন্দেহ করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বগুড়ায় দুই মামলায় আ.লীগের ছয় নেতা-কর্মী ১০ দিনের রিমান্ডে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত