Ajker Patrika

অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার টাকা জোগাতে ভ্যান চালাচ্ছেন স্ত্রী

মিজানুর রহমান, তানোর
অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার টাকা জোগাতে ভ্যান চালাচ্ছেন স্ত্রী

‘সংসারের ঘানি টানতে টানতে ক্লান্ত আমি কিন্তু কিছুই করার নাই। অভাবের সংসারের হাল ধরতে ভ্যান চালাচ্ছি। ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করি তা দিয়েই তিনবেলা অসুস্থ স্বামী ও মা-ছেলের খাবার জোগাড় করতে হয়।’ এভাবেই নিজের জীবনযাত্রার কথা বলছিলেন রাজশাহীর তানোরের সরঞ্জাই ইউনিয়নের ভাগনা হঠাৎপাড়া গ্রামের আমিরুল্লাহের স্ত্রী ফরিদা বিবি (৩৩)। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষক আমিরুল্লাহের সঙ্গে ২০ বছর আগে বিয়ে হয় ফরিদার। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ফরিদাকে বিয়ে করেন আমিরুল্লাহ। আমিরুল্লাহ ও ফরিদার বিয়ের প্রায় ৬ বছর পর এক ছেলের জন্ম হয়। এর কিছুদিন পরই প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়েন আমিরুল্লাহ। 

স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, স্বামীর চিকিৎসার টাকা ও সংসারের তিনবেলা খাবার জোগাড় করতে ফরিদা গ্রামে-গ্রামে ভিক্ষা শুরু করেন। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে সংসার চলছিল। পরে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটো ভ্যান কেনেন ফরিদা। বিগত দেড় বছর ধরে ভ্যান চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। 

ফরিদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভাবের সংসারে বাবা-মা বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে ভিক্ষার টাকায় সংসার চলত। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে স্বামী অসুস্থ থাকায় সংসারের হাল ধরতে অটো ভ্যান চালাচ্ছি। আগে মানুষের বাড়ির বারান্দায় রাত কাটিয়েছি। এখন গ্রামের রাস্তার ধারে টিন দিয়ে একটা ঘর বানিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।’ 

ফরিদা আরও বলেন, ‘অটো ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি কিছু টাকা ভ্যানের ব্যাটারি কেনার জন্য জমা করে রাখি। ভিক্ষা করতে মন চায় না। ভিক্ষা করলে সারা দিনে এক–দেড় কেজি চাল আসে। আবার কেউ হয়তো এক বেলা খাওয়াবে। কিন্তু আমার স্বামী–সন্তানকে খাওয়াতে পারব না। তাই ভ্যান চালানো শিখেছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছি। আমি ধন-সম্পদ কিছু চাই না। সরকারি একটা বাড়ির পাশাপাশি একটা ভালো গাড়ি পেলে সেটা দিয়েই সুখে থাকব।’ 

ফরিদা বিবির ভ্যান চালানো প্রসঙ্গে সরঞ্জাই ‍ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘প্রায় দেখি ফরিদা ভ্যান গাড়ি চালাচ্ছে। কোনো সময় মালামাল নিয়ে যাচ্ছে, আবার কোনো সময় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। নারী হয়েও সে পুরুষদের মতো ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছে।’ 

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফরিদাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে আশ্বাস দিয়ে সরঞ্জাই ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শুয়াইবুর রহমান বলেন, ‘ফরিদা খুবই পরিশ্রমী ও সংগ্রামী নারী। অটো ভ্যান চালিয়ে অসুস্থ স্বামী ও সন্তানের দেখভাল করছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁকে সাধ্যমতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।’ 

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘ভ্যান চালিয়ে অসুস্থ স্বামী ও সন্তানের দেখভাল করছে। বিষয়টি অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো। এ থেকে বোঝা যায়, যদি মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে তবে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। যদি কখনো তাঁর সহযোগিতার প্রয়োজন হয় উপজেলা প্রশাসন তাঁর পাশে দাঁড়াবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত