Ajker Patrika

অধিক উৎপাদনে অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে আমসত্ত্ব

মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২১, ২০: ৪২
Thumbnail image

আমের রাজধানী খ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সারা দেশে আমসত্ত্ব সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস। এ জেলা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আমসত্ত্ব রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে যাচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে আমের উৎপাদন বেশি থাকায় এবং লকডাউনের প্রভাবে আমের দাম কম হওয়ায় বাড়ে আমসত্ত্ব উৎপাদনের পরিমাণ। এ কারণে প্রভাব পড়েছে এর দামেও। গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমসত্ত্ব কিনছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। 

পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বেশি আমসত্ত্ব উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে জেলায় এখনো তেমন কোনো আমসত্ত্ব তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। তাই পুরোটাই গৃহিণীদের কাছ থেকেই সরবরাহ হয় আমসত্ত্ব। লকডাউনে আমের দাম কম থাকায় আমসত্ত্ব বানানোতে বেশ আগ্রহ দেখান গৃহিণীরা। 

বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহিণীদের কাছ থেকে আমসত্ত্ব কিনছেন ব্যবসায়ীরাগৃহিণীরা বলছেন, জেলায় সবচেয়ে বেশি আমসত্ত্ব তৈরি হয় আশ্বিনা আমের। গত বছর এই জাতের আমের আমসত্ত্ব বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। অথচ চলতি বছর বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে অন্তত ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি আমসত্ত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে দাম কম। 

শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনারায়ণপুর গ্রামের সাহারুল ইসলাম। গত ২০ বছর ধরে গৃহিণীদের থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমসত্ত্ব কিনে আড়তে বিক্রি করেন। সাহারুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ঘুরে এক মণ আমতা (আমসত্ত্ব) কিনতে পেরেছি ৷ অথচ গত বুধবার (১৮ আগস্ট) একটি গ্রাম থেকেই ৫ মণ আমতা কিনেছি। আমি ছাড়াও একই সময়ে আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী আমতা কিনেছে। গত বছর ৭০ থেকে ১০০ টাকা দিয়েও খুঁজে খুঁজে কিনতে হয়েছে। অথচ এবার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যেই। অবস্থা এমন যে, আড়তে জিজ্ঞেস করে আমতা কিনতে বের হতে হচ্ছে। কারণ তারা যদি পরে কিনে না নেয়। আমের অনেক ফলন হয়েছে, তাই দাম এত কম। 

আমের উৎপাদন বেশি আর লকডাউন থাকায় এবার আমসত্ত্বের দাম কমপ্রতিবছর বাড়িতে আমসত্ত্ব তৈরি করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন গৃহিণী শাহনাজ বেগম। তিনি জানান, বাড়ির আশপাশে অনেক বাগান। এখান থেকে আম কুড়িয়ে ও নিজেদের বাগানের আমগুলো সাধারণত বিক্রি করে দেয়। কিন্তু এ বছর আমের এত কম দাম যে, তা বিক্রি না করে আমতা বানিয়েছি। কিন্তু আমতা বানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। কারণ এ বছর প্রায় অর্ধেক দাম হয়ে গেছে। 

কানসাট-গোলাপ বাজার গ্রামের গৃহবধূ নুরেসা খাতুন বলেন, এ বছর আশ্বিনা আমের সময় অনেক বৃষ্টিপাত হয়েছে ৷ আমসত্ত্ব বানাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রোদের। কিন্তু রোদ না পেয়ে অনেক আমসত্ত্ব নষ্ট হয়েছে। তারপরও যেগুলো করতে পেরেছি, বাড়ির সামনে পাইকার এসে নিতে চায় না। অনেক কম দাম বলছে। কি আর করার, বাধ্য হয়েই দিতে হচ্ছে। 

কানসাট গোলাপনগর মোড়ের আড়তদার মো. আলী হোসেন জানান, এ বছর আমের উৎপাদন বেশি, তাই দামও অনেক কম। পাইকারি ব্যবসায়ীরা গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমসত্ত্ব সংগ্রহ করে আমাদের এখানে এসে বিক্রি করে। গৃহিণীদের থেকে কেনা দামের ৩-৫ টাকা লাভে এসব বিক্রি করে। প্রতিদিন আড়তে আমসত্ত্ব সংগ্রহ করে ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকার শ্যামবাজারে চলে যায়। পরে সেখান থেকে কোল্ড স্টোরেজে সংগ্রহ করে রাখা হয় এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। 

সারা দেশ থেকে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আমসত্ত্ব সরবরাহ করেন চাঁপাই ম্যাংগো'র ব্যবস্থাপক শহিদুল হক হায়দারী। সারা দেশের গ্রাহকদের থেকে অর্ডার নিয়ে গ্রামে গ্রামে গৃহিণীদের নিয়ে কয়েকটি আমসত্ত্ব বানানোর দল গঠন করেছেন তিনি। সেসব নারীরা শহিদুল ইসলাম হায়দারীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমসত্ত্ব তৈরি করেন। এতে ওই নারীরা দাম যেমন বেশি পান, তেমনি শহিদুল ইসলাম তাদের থেকে মানসম্মত আমসত্ত্বও সংগ্রহ করতে পারেন। তিনি বলেন, একদিকে আমের উৎপাদন বেশি, অন্যদিকে কঠোর লকডাউনের প্রভাবে আমের দাম কম। তাই গৃহিণীরা এ বছর আমসত্ত্ব উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন বেশি হওয়ায় চলতি বছরে আমসত্ত্বের দাম অনেক কম। 

আমসত্ত্বমজুত করছেন ব্যবসায়ীরামানসম্মত ও সঠিক উপায়ে বানালে অধিক দাম পাওয়া সম্ভব উল্লেখ করে শহিদুল হক বলেন, জেলায় এখনো বাণিজ্যিকভাবে আমসত্ত্ব উৎপাদন শুরু হয়নি। তবে ভালো মানসম্মত আমসত্ত্ব পেতে নারীদের সঠিক নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ বাজারে থাকা বেশির ভাগ আমসত্ত্বের পুরুত্ব ঠিক নেই। আবার অনেকেই ভালো করে রোদে না শুকিয়ে বাজারজাত করেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ফলন বেশি হয়েছে। তবে ফলন বেশি হওয়ার থেকে করোনার বেশি প্রভাব পড়েছে আম ও আমসত্ত্বের দামে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আম বাইরে যেতে পারেনি। তাই অনেকেই আমসত্ত্ব উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু অধিক পরিমাণে উৎপাদন হওয়ার কারণে দাম অনেক কমে গেছে। 

মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় এ বছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে এসব আম বাগানের প্রায় ২৭ লাখ গাছ থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত