Ajker Patrika

আদালতে শিশুর কান্নায় জোড়া লাগল ভাঙা সংসার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০: ৩৩
Thumbnail image

ছয় মাসের শিশুটির বাবা আসামির কাঠগড়ায়। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের কোলে শিশুটি কাঁদছে। এই দৃশ্য নজরে পড়ে আদালতের। তখন আগে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া বাদী ও আসামির মামলা আপস করে তাৎক্ষণিকভাবে আদালতেই আবার তাঁদের বিয়ের আয়োজন করেন। তাতে জোড়া লাগে ভেঙে যাওয়া সংসার।

আদালত জানতে পারেন, সামান্য ভুল-বোঝাবুঝি থেকে আট মাস আগে তাঁদের সংসার ভেঙে যায়। আইনি জটিলতায় জড়িয়ে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছিল। এই অবস্থায় আদালতের একটি মানবিক উদ্যোগে দুই কার্যদিবসেই মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে-২-এ তাঁদের বিয়ে হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে কর্মচারী শিমুল পারভেজের সঙ্গে ২০২১ সালের ২ এপ্রিল জান্নাত ফেরদৌসের বিয়ে হয়। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর এলাকার সমসাদিপুর মহল্লায়। সংসার ভেঙে যাওয়ার কয়েক দিন পর গত ১২ অক্টোবর মেয়েটির মা আদালতে মামলা করেন।

আজ আদালতে সেই মামলার জামিন শুনানিকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুজ্জামান লক্ষ করেন, সাক্ষীর কাঠগড়ায় মামলার বাদী জান্নাত ফেরদৌসের কোলে ছয় মাসের ফুটফুটে একটি শিশু কাঁদছে। আসামির কাঠগড়ায় ২২-২৩ বছরের এক তরুণ শিমুল পারভেজ; যাঁর সঙ্গে বাদীর আট মাস আগে বিয়ের পর সামান্য ভুল-বোঝাবুঝিতে ছাড়াছাড়ি হয়েছে। ইতিমধ্যে তা কার্যকরও হয়েছে। 

আদালতে জান্নাতের মা-বাবা এবং শিমুলের বাবা উপস্থিত ছিলেন। শুনানিকালে জান্নাতের চোখে পানি ছিল এবং শিমুলও মাথা নিচু করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুই পক্ষের আইনজীবী পক্ষে-বিপক্ষে তাঁদের বক্তব্য দেন। কিন্তু আদালতের দৃষ্টি পড়ে থাকে অসহায় শিশুটির দিকে। আদালত জানতে চান শিশুটির ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাদী ও আসামি আপস করতে চান কি না। 

তখন জান্নাত ও শিমুল পরস্পরের কিছু দোষত্রুটি উল্লেখ করতে শুরু করেন। এই পর্যায়ে আদালত নিজ দায়িত্বে সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাঁদের উদ্দেশে কিছু উপদেশমূলক কথা বলেন। একপর্যায়ে তাঁরা দুজনই আপস করতে রাজি হন। কিন্তু তা অবশ্যই আদালতের মধ্যস্থতায় করতে চান। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীর অনুরোধে বিচারকাজ শেষে আদালত কক্ষেই উভয় পক্ষের আইনজীবী, অভিভাবকেরা ও বার সমিতির সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে কাজি ডাকেন। আদালতের ভেতরেই এক লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক পুনরায় তাঁদের বিয়ে দেওয়া হয়। আদালত সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।

সবশেষে আদালতের বিচারক স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই তাঁর খাস কামরায় ডেকে নিয়ে সুন্দর করে সংসার করার উপদেশ দিয়ে শিশুটিকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ আদর করেন। আদালতের এই মানবিক উদ্যোগে বাদী, আসামি, আইনজীবী, আদালতের পেশকার, পিয়ন ও ম্যাজিস্ট্রেট সবার চোখেই তখন আনন্দের পানি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী রেবেকা সুলতানা বলেন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুজ্জামান আদালতে যোগদানের পরই তিনি বিভিন্ন মামলায় মানবিক আচরণ, সুন্দর ব্যবহার ও আন্তরিক মধ্যস্থতায় অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে যাচ্ছেন। তিনি মানবিক বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আদালত কক্ষে এই ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজনের মাধ্যমে একটি সংসার জোড়া লাগল। একটি শিশুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত