Ajker Patrika

নওগাঁয় উত্তেজনার পেছনে স্কুল কমিটির দ্বন্দ্ব! 

নওগাঁ প্রতিনিধি
Thumbnail image

নওগাঁর মহাদেবপুরে স্কুলড্রেস না পরে আসায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটি পক্ষ হিজাব পরে আসার কারণেই শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেও এর সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি। 

কয়েকজন শিক্ষার্থী এদিনের ঘটনা সম্পর্কে জানায়, হিজাবের কারণে সেদিন কাউকে মারধর করা হয়নি। তারা জানায়, মারধর করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনাতন ধর্ম ও ছেলেরাও ছিল। স্কুলড্রেস পরে না আসার কারণে মেয়েদের মারধর করেন শিক্ষক আমোদিনী পাল। আর ছেলেদের মারধর করেন বদিউজ্জামান নামে আরেক শিক্ষক। এরপর বাড়ি চলে যায় ৮ ম,৯ম ও ১০ম শ্রেণির প্রায় ১৮ জন শিক্ষার্থী। ঘটনার পরদিন এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

মারধরের শিকার হওয়াদের মধ্যে সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থী ছিল এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের একজন এএসপির সমন্বয়ে একটি দল অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল, মারধরের শিকার শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। সব পক্ষের বক্তব্যে মনে হয়েছে, ওই শিক্ষিকা স্কুলড্রেস না পরে আসায় শাসন করেছেন। মারধরের শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন সনাতন ধর্মেরও ছিল। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন ৬ এপ্রিল স্কুলড্রেস পরে না আসার কারণে কয়েকজন ছেলে শিক্ষার্থীকেও শাসন করা হয়। ঘটনাটি পরে হিজাব বিতর্কের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছে।’ 

এদিকে ঘটনা সম্পর্কে আরেকটি পক্ষ বলছে, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে কোন্দল থাকায় নিজ স্বার্থ হাসিলে একটি পক্ষ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা উসকানি দিচ্ছে। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আমোদিনী পাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ ও কমিটির একটি পক্ষ এই গুজব ছড়িয়েছে। আমার সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

আমোদিনী পাল বলেন, ‘কোনো ধর্মীয় ইস্যুতে নয়। স্কুলড্রেস পরে না আসাতেই সেদিন শিক্ষার্থীদের কিছুটা শাসন করেছিলাম। এখন সেই ঘটনায় ধর্মীয় রং লাগানো হচ্ছে। কিছু লোক এ কাজ করছে।’ তিনি বলেন, এর আগেও শিক্ষার্থীদের স্কুলড্রেস পরে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা শোনেনি। 

একটি সূত্রে জানা গেছে, মহাদেবপুর উপজেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। বহু বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য আছে। এখানেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ক্যারম উৎসব হয়ে থাকে। গ্রামের এই স্কুলটিতে অনেক দিন কোনো উন্নয়ন হয়নি। সরকারি বরাদ্দের অর্থ কোনো কাজে লাগানো হয়নি। এ নিয়ে বর্তমান প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কয়েক দফায় গ্রামবাসীরা সভা করেছে। প্রধান শিক্ষক কখনো সেই টাকার হিসাব দেননি। 

জানা গেছে, চলতি মাসেই প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের অবসরে যাওয়ার কথা। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আমোদিনী পালের ওই পদে বসার কথা। আমোদিনী পাল প্রধান শিক্ষক হলে তাঁকে হিসাব দিতে হবে। সে কারণে ধরণী কান্ত চান না আমোদিনী পাল প্রধান শিক্ষক হোন। 

এদিকে এ ঘটনার পর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মালেককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

তদন্ত কমিটির বিষয়ে ইউএনও মিজানুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’ 

এ ব্যাপারে নওগাঁর পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই শিক্ষকের বাড়ি এবং স্কুলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত