Ajker Patrika

‘হামাগোরক দেখার কেউ নাই, হামরা মরলে কি আর বাঁচলে কি!’ 

রাব্বিউল হাসান, কালাই (জয়পুরহাট)
‘হামাগোরক দেখার কেউ নাই, হামরা মরলে কি আর বাঁচলে কি!’ 

দিনমজুর আব্দুল মোমিন (৪৫)। ৬ জন সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। তাঁর আয় রোজগার ছাড়া চলে না সংসার। কাঁচাবাজার করতে এসে তিনি বলেন, ‘মাঠে কাজ নাই। বাড়িতে বসে সময় কাটায়। ঘরে যা মজুত ছিল তাও প্রায় শেষের পথে। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে সংসার চালামু সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তাই আছি। কত দিন ধরে ছলপলেরা গরুর গোশত খাইবার চাই। কামাই রোজগার নাই বলে সেই গোশতও কিনবা পারি না। সারা দিন কামাই করে ৩০০-৪০০ টাকা পাই। তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কিনতেই শেষ। এখন ডাল-ভাত খেয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি।’ 

শুধুমাত্র আব্দুল মোমিন বিপাকে পড়েছেন তা নয়। রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মধ্য আয়ের ও খেটে খাওয়া হাজারো মানুষ। 

আজ সোমবার উপজেলা বিভিন্ন হাট-বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। প্রতি কেজি করলা ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, গুটি বেগুন ৭০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শসা ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লেবুর প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। 

খুচরা সবজি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানের আগে বেগুন বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকায়। আজকে সেই বেগুন প্রতি কেজি ৫০ টাকা। গুটি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায় আজকে সেটা ৭০ টাকা। আমরা পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে সবজি কিনে আরও বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছি। 

পুনট হাটে কাঁচাবাজার করতে আসা উপজেলার মূলগ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, ‘কৃষি কাজের ওপরে আমার সংসার চলে। পরিবারের ৪ জন সদস্য। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সেখানে এখন বেঁচে থাকায় কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’ 

পুনট হাটে কাঁচাবাজারের ক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘হামাগোরক দেখার কেউ নাই। হামরা মরলে কি আর বাঁচলে কি!’ 

অন্যদিকে চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রি-ধান ৪৯ প্রতি কেজি ৪৪ টাকা, স্বর্ণা-৫ প্রতি কেজি ৪৩ টাকা ও কাটারি ভোগ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে সুগন্ধি চালে। সুগন্ধি চাল খোলা প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

সুগন্ধি চালের দাম নিয়ে উপজেলার মোস্তফা স্টোরের স্বত্বাধিকারী রুদ্র ফারদিন বলেন, ‘রমজানের আগ মুহূর্ত থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি সুগন্ধি চালে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। সুগন্ধি চাল খোলা প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ রমজানের আগে সুগন্ধি চাল খোলা প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’ 

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টুক টুক তালুকদার বলেন, ‘রমজান মাস উপলক্ষে বাজার তদারকি অব্যাহত রয়েছে। বাজার তদারকির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বেশিদামে সয়াবিন তেল বিক্রি করায় কয়েকটি দোকানিকে জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত