Ajker Patrika

জব্দ অটোরিকশার ব্যাটারি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে চুরি হওয়ার অভিযোগ

গনেশ দাস, বগুড়া
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৩০
জব্দ অটোরিকশার ব্যাটারি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে চুরি হওয়ার অভিযোগ

বগুড়া সদর ট্রাফিক ও পুলিশ ফাঁড়িতে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে চারদিকে ইটের উঁচু দেয়াল। আছে দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেষ্টনী। এ ছাড়া ৬টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রয়েছে সেখানে। এমন নিরাপত্তার মধ্যে ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে জব্দ করা সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। কিন্তু এসব তিন চাকার যানবাহনের বেশ কয়েকটি ব্যাটারি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম ফাঁড়ি থেকে চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

ব্যাটারি চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয় পুলিশের পক্ষ থেকে আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, অটোরিকশার চালকেরাই এসব চুরির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু চালকেরা বলছেন, এত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে প্রতিনিয়ত ব্যাটারি চুরির দায় কার? ব্যাটারি চুরির অভিযোগ করতে গেলে বকা দিয়ে ফাঁড়ি থেকে তাঁদেরকে বের করে দেওয়া হয়। 

বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কে একই ভবনে সদর পুলিশ ফাঁড়ি ও সদর ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। 

অটোরিকশা চালক সাব্বির হোসেনের বাড়ি বগুড়া শহরের নিশিন্দারা চারমাথা এলাকায়। তিনি জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সাতমাথা থেকে ট্রাফিক পুলিশ তাঁর অটোরিকশা জব্দ করে সদর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় জব্দের তালিকার একটি কপি তাঁর হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেখানে লিখে দেওয়া হয় ব্যাটারি ও চাকাবিহীন অটোরিকশা। 

জব্দের বিষয়ে অটোরিকশা চালক সাব্বির বলেন, ‘রাস্তা থেকে সচল অটোরিকশা আটকের পর লেখা হলো ব্যাটারি এবং চাকাবিহীন রিকশা। তাহলে চাকা ও ব্যাটারিবিহীন রিকশা রাস্তায় চলে কীভাবে? বাধ্য হয়ে সাব্বির ব্যাটারি ও তিনটি চাকা খুলে নিয়ে আসি। ৯ দিন পর ১৫ ফেব্রুয়ারি আমাকে যখন অটোরিকশাটি ফেরত দেওয়া হয় তখন এর ইলেকট্রিক কন্ট্রোল বক্স ছাড়াও লাইট কন্ট্রোল তারগুলো অটোরিকশার সঙ্গে ছিল না। বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশকে জানালে গালিগালাজ করে ফাঁড়ি থেকে বের করে দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘চুরি যাওয়া মালামাল কিনে অটোরিকশাটি চলাচল উপযোগী করতে আমার খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা।’ 

অটোরিকশা চালক সাব্বিরের মতো জেলার শাজাহানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ি গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সামাদ, জেলা সদরের এরুলিয়া গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রহমত, মাঝিড়া এলাকার অটোরিকশাচালক জব্বারসহ অসংখ্য চালকের অভিযোগ সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা জব্দ করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর ব্যাটারি চুরি হয়ে যায়। এভাবে গত ছয় মাসে অন্তত ৪০ জন চালকের অটোরিকশা থেকে ব্যাটারি চুরি হয়েছে সদর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে। 

কয়েকজন অটোরিকশা চালক বলেন, অটোরিকশা আটকের পর ৮ থেকে ১০ দিন ফাঁড়িতে রাখা হয়। পরে তা আনতে গেলে ব্যাটারি পাওয়া যায় না। যে কয়দিন অটোরিকশা আটকে রাখা হয় সে কয়দিন ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হয়। পরে আবার ব্যাটারি কিনতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। 

ট্রাফিক পুলিশ অটোরিকশা জব্দ করে ফাঁড়িতে রাখে বলে জানান বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সুজন মিঞা। তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা জব্দ করে তাদের হেফাজতে পুলিশ ফাঁড়ি চত্বরে রাখা হয়। মাঝেমধ্যেই এখান থেকে ব্যাটারি চুরির ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চুরি হওয়া দুটি ব্যাটারি উদ্ধার করেছি। ব্যাটারি চুরির অভিযোগে আটক দুজনেই রিকশা চালক।’ 

সদর ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ মাহবুবুল ইসলাম খান বলেন, ‘সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সরঞ্জাম চুরির সঙ্গে অটোরিকশা চালকেরাই জড়িত। আবার অনেক সময় চুরি না হলেও তাঁরা বাড়িয়ে বলেন। এ কারণে আমরা অটোরিকশা জব্দ করার পর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারি খুলে নিয়ে যেতে বলি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত