Ajker Patrika

বগুড়ার এক বিদ্যালয়ে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগের অভিযোগ 

শাজাহানপুর(বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার এক বিদ্যালয়ে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগের অভিযোগ 

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পারতেখুর উচ্চবিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ সংক্রান্ত রেজুলেশন করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। 

সেই জাল স্বাক্ষরের রেজুলেশন দিয়ে চারটি নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীও রয়েছে। এতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং এলাকাবাসির মধ্যে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলছেন চলতি বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দুই ধাপে চারটি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায় গত ৩ জুলাই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড এর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য আলমগীর হোসেন। 

নিয়োগে অনিয়মের কথা আজকের পত্রিকার কাছে স্বীকার করেছেন কমিটির সকল সদস্য।

এদিকে নিয়োগের পর থেকেই বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার দেবনাথ। নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলছেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক একেএম আব্দুল বারীসহ অন্য সহকারী শিক্ষকরা। 

শিক্ষক কর্মচারীরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত হাজিরা খাতায় কোনো স্বাক্ষর দেখা যায়নি নিয়োগ পাওয়া ওই ৪জনকে। 

নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন— নিরাপত্তা কর্মী মো. আরিফুল ইসলাম কাজল, পরিচ্ছন্নতা কর্মী মোছা. হাফছা খাতুন। নিরাপত্তা কর্মী মোঃ আরিফুল ইসলাম কাজল এর স্ত্রী হচ্ছেন হাফছা খাতুন। নৈশ প্রহরী মো. মেহেদী হাসান এবং অফিস সহকারী পদে আরিফুর রহমান।

মো. আরিফুল ইসলাম কাজল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোট  দুই বারে দুটি পরীক্ষায় আমি এবং আমার স্ত্রীসহ মোট চারজন নিয়োগ পেয়েছি। অন্য শিক্ষক কর্মচারীদের সঙ্গে হাজিরা খাতায়ও স্বাক্ষর করছি।’

ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, গত বছরের ২২ মে ম্যানেজিং কমিটি ভাঙার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে কমিটির ৮ জন সদস্য আবেদন করি। প্রধান শিক্ষক তা গ্রহন করে ৩০ মে রাজশাহী ম্যাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। এরপর বিদ্যালয়ে গোপনে নিয়োগ সংক্রান্ত রেজুলেশন করেন প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। রেজুলেশনে আমাদের নামে যে স্বাক্ষর আছে তা সবটাই জাল।

সদস্যরা বলেন, কোথায় কি ভাবে নিয়োগ হয়েছে তা আমরা কেউ কিছুই জানি না।

সরেজমিনে গত সোমবার, মঙ্গলবার এবং বুধবার দক্ষিন পারতেখুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার দেবনাথকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক তাঁর বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছেন।  

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক একেএম আব্দুল বারী বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক অসুস্থ তাই বিদ্যালয়ে আসেননি। তিনি ছুটি নিয়েছেন কি না তা আমার জানা নাই। আমি নিয়োগ কমিটির কেউ না তাই এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। নিয়োগ প্রাপ্তরা বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন কি না তাও জানি না। সকল খাতা পত্র প্রধান শিক্ষকের কাছে আছে।’

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগ এর সদস্য আলমগীর হোসেন স্বপন আজকের পত্রিকাকে জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক অফিশিয়ালভাবে ছুটি নিয়েছেন। নিয়োগ সংক্রান্ত রেজুলেশনে সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে কি না তা সদস্যরাই ভালো বলতে পারবেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুল হোসেন বলেন, ‘দক্ষিণ পারতেখুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রাপ্তরা সবাই বেতন পাচ্ছেন। রেজুলেশনে স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ দেওয়া হলে তা ম্যানেজিং কমিটি বুঝবে। এটা আমার দেখার বিষয় নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত