Ajker Patrika

১৫৯ বিঘা ওয়াক্ফ এস্টেটের ‘জমিদার’ তিনি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ৪০
Thumbnail image

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়াজ উদ্দিন ওয়াক্ফ এস্টেটের ১৫৯ বিঘা জমি তছরুপের অভিযোগ উঠেছে মুতাওয়াল্লি গোলাম মোর্শেদ মিয়ার বিরুদ্ধে। এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক সুবিধাভোগী ওয়ারিশ।

অভিযোগকারীর দাবি, মুতাওয়াল্লি ১১ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত একটি আমবাগান দখল করে ইজারা দিয়েছেন। আর ২৫ বিঘা জমি আত্মীয়স্বজনসহ কয়েকজনের নামে নামজারি করেছেন। এসবের প্রতিবাদ করায় তাঁদের ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। 
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুতাওয়াল্লি গোলাম মোর্শেদ।

আবু আহমেদ শামসুল আরেফিন নামের এক সুবিধাভোগী ওয়ারিশের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে মারা যান শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। এর আগে তিনি নিজ নামে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিয়াজ উদ্দিন ওয়াক্ফ এস্টেট। এরপর তাঁর সব সম্পদ এস্টেটের নামে হস্তান্তর করেন। তখন থেকেই মুতাওয়াল্লি নিয়োগ করে সব সম্পদ দেখাশোনা করা হতো। কিন্তু ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ওয়াক্ফ এস্টেট প্রশাসন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাসিন্দা গোলাম মোর্শেদ মিয়াকে অবৈধভাবে মুতাওয়াল্লি  নিয়োগ করে। এরপর থেকেই তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকৃত অংশীদারদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে নিজে ভোগদখলসহ অন্যের নামে জমির নামজারির মাধ্যমে ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পদ তছরুপ করে আসছেন। বাধা দিতে গেলে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক মামলা।

এস্টেটের ওয়ারিশ বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ওয়াক্ফ এস্টেটের মুতাওয়াল্লি হওয়ার আগে থেকেই গোলাম মোর্শেদের নজর পড়ে সম্পদের ওপর। এরপর থেকেই নানান কৌশলে তিনি বিপুল টাকার বিনিময়ে মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন। সেই থেকে তিনি ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পদ তছরুপে মেতে ওঠেন। বর্তমানে তিনি ২৫ বিঘা জমি নিজ আত্মীয়স্বজন এবং বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নামে নামজারি করেন। এই নামজারিগুলোর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

তরিকুল ইসলাম নামে আরেকজন ওয়ারিশ বলেন, ‘গোলাম মোর্শেদ মিয়া ১১ বিঘার একটি আমবাগান দখল করে ইজারা দিয়েছেন। সেই টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এই বাগান ইজারার একটি টাকাও অংশীদারদের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এমনকি বাগান ইজারার প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা ও হুমকি দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে পরপর চারটি মামলা করেন, যা আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হলে খারিজ হয়ে যায়।’

কাউসার আলী নামের আরেকজন বলেন, ‘জন্মের পর থেকে সব অংশীদার ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পদ সমবণ্টনের মাধ্যমে ভোগ করে আসছিলাম। কিন্তু গোলাম মোর্শেদ মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হওয়ার পর এক কেজি চাল কেনারও টাকা দেননি; বরং মামলা-হামলা করে এস্টেট থেকে বিতাড়নের চেষ্টা করছেন। মামলার পরে আমাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।’ তিনি এস্টেটের সব সম্পদ ফিরিয়ে দিতে এবং গোলাম মোর্শেদকে অপসারণ করতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে জানতে গোলাম মোর্শেদের সঙ্গে বারবার দেখা করতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। তবে মুঠোফোনে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নিয়মকানুন মেনেই ওয়াক্ফ এস্টেট পরিচালনা করছেন।’

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পদ তছরুপের কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে রাজস্ব বিভাগ ব্যবস্থা নেবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত