Ajker Patrika

দুই সহোদর শিশুর মৃত্যু: নিপাহ ভাইরাস নয়, কারণ এখনো অজানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০: ৩৩
দুই সহোদর শিশুর মৃত্যু: নিপাহ ভাইরাস নয়, কারণ এখনো অজানা

জ্বর, বমির পর সারা শরীর ভরে গিয়েছিল ছোপ ছোপ কালো দাগে। চিকিৎসা দূরের কথা, রোগ শনাক্তের সময়ও পাননি চিকিৎসকেরা। দুই দিনের ব্যবধানে একই লক্ষণ নিয়ে মারা গেছে দুই সহোদর শিশু। 

চিকিৎসকেরা ধারণা করছিলেন, কুড়িয়ে আনা বরই না ধুয়ে খেয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে শিশু দুটি। তবে ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের দেহে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ছিল না। 

শিশু দুটি এত দ্রুত সময়ের মধ্যে কী কারণে মারা গেল, সে প্রশ্ন অজানাই থেকে গেল। মৃত্যুর কারণ জানতে ঢাকায় পাঠানো নমুনার নানা পরীক্ষা চলতে থাকবে বলে জানা গেছে। 

মারা যাওয়া এ দুই শিশু হলো—মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। আগামী ২ মার্চ মুনতাহা মারিশার বয়স হতো ২ বছর। আর ৩০ মে পাঁচ বছর পূর্ণ হতো মুফতাউল মাশিয়ার বয়স। তাদের বাবার নাম মনজুর রহমান (৩৫)। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিতের প্রভাষক। বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) ও দুই মেয়েকে নিয়ে চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন তিনি। 

১৩ ফেব্রুয়ারি কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে পড়া বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন গৃহকর্মী। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে, সঙ্গে বমি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। দুই দিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি মাশিয়ারও জ্বর ও বমি শুরু হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর সিএমএইচ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরদিন গতকাল শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়। 

দুই শিশুর মৃত্যুর পর সংক্রমণের আশঙ্কায় তাদের বাবা-মাকে আর হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা রামেক হাসপাতালেই ছিলেন। 

এই পরিবারে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা করেছিলেন চিকিৎসকেরা। তাই মারিশা ও তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে গতকাল শনিবার পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় আইইডিসিআরে। সেখানে ইএলআইএসএ এবং পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষাতেই নিপাহ ভাইরাস রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। 

জ্বর, বমির পর ফোসকার মতো ছোপ ছোপ দাগ দেখে চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করেছিলেন, শিশু দুটি মিশেরিয়া ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। এ জন্য রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে মিশেরিয়া পরীক্ষাও করা হয়। কিন্তু এতেও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেন, ‘দেশে নিপাহ ও ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ মাত্র কয়েকটি ভাইরাস পরীক্ষার পদ্ধতি আছে। আর কোভিড-১৯-এর সময় করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়। অন্য কোনো ভাইরাস পরীক্ষার সক্ষমতাই নেই। এ অবস্থায় শিশু দুটি কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল, তা আদৌ জানা যাবে কি না তা নিয়েই অনিশ্চয়তা রয়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা নিপাহ ভাইরাস আর মিশেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার আশঙ্কা করেছিলাম। পরীক্ষায় এ দুটো রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। আমরা আশঙ্কা করছি, কুড়িয়ে আনা বরই না ধোয়া অবস্থায় খেয়েই অজানা কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল শিশু দুটি। এভাবে জ্বর, বমির পর র‍্যাশ উঠে দ্রুতই রোগী মারা যাওয়া আগে কোনো রোগের ক্ষেত্রে আমি দেখিনি।’ 

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এটা কী ভাইরাস তা চাইলে সরকার বের করতে পারবে। এ জন্য মাশিয়া মারা যাওয়ার আগেই তার পাকস্থলী থেকে কিছু খাবার বের করে সংরক্ষণ করেছি। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট চাইলে এটা আমরা দিতে পারব। পরীক্ষা করলে কিছু জানা যেতেও পারে।’ 

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘শিশু দুটির নিপাহ ভাইরাস রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তারা কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল তা এখনই বলা যাবে না। এ জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতেই থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত