Ajker Patrika

মৌসুমের শুরুতেই আলুর দাম নিয়ে বিপাকে চাষিরা

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৯: ২২
মৌসুমের শুরুতেই আলুর দাম নিয়ে বিপাকে চাষিরা

মৌসুমের শুরুতেই আলুর দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বগুড়ার শিবগঞ্জের চাষিরা। বাম্পার ফলন হলেও চোখেমুখে তাঁদের চিন্তার ছাপ। ক্রেতাসংকটে রীতিমতো মাথায় হাত পড়েছে। বাজার পরিস্থিতি ঘুরে না দাঁড়ালে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। 

আজ সোমবার সরেজমিন বগুড়ার মহাস্থান সবজি বাজারে দেখা যায়, ভোর থেকে ভ্যান, পিকআপ ও ভটভটিতে করে বাজারে আলু বিক্রি করতে নিয়ে আসছেন জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা। ক্রেতা কম হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাঁদের। এ ছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীরা নামমাত্র দাম বলে চলে যাচ্ছেন অন্য বিক্রেতার কাছে। তাই কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। 

এই বাজারে প্রতি কেজি আলু ৫ টাকা থেকে সাড়ে ৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ আলু ২০০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে। আলুর মোকাম হিসেবে পরিচিত বগুড়াতেই আলুর দাম এখন নিম্নমুখী। এতে করে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে বোবা কান্না। 

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাদা গ্র্যানুলা প্রতি মণ আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা; অ্যাস্ট্রারিক বা স্টিক, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও ক্যারেট জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় এবং লাল পাকড়ি জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মণ দরে। 

আলুর দাম নিয়ে শিবগঞ্জের মোকামতলা এলাকার আলুচাষি জাহিদ হাসান বলেন, ‘খুব ভোরে আলু ধুয়ে, বস্তায় করে বাজারে এনেছি। এখন কেউ দামই করছেন না। দেড় ঘণ্টা আলু নিয়ে বসে থাকার পর ২০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। আড়াই মণ আলু বিক্রি করে ৫০০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনে বাড়ি যাব।’ 
 
মোকামতলার আমজানি গ্রামের হাফিজুর রহমান রুবেল বলেন, ‘স্টিক আলু নিয়ে বাজারে এসেছি। কিন্তু ক্রেতাই নাই। আলুর ফলন ভালো হলেও এবার দাম না পাওয়ায় আমরা খুব হতাশ।’ 

রায়নগর ইউনিয়নের রাজু মিয়া সাড়ে তিন মণ আলু নিয়ে চার ঘণ্টা যাবৎ বসে আছেন বাজারে। তিনি বলেন, ‘কেউ দামই বলছে না। শুরুতে একজন ব্যবসায়ী ২২০ টাকা মণ দাম করেছিলেন। কিন্তু তিনি এখন নাই।’ 
 
আলু নিয়ে আসা তেলিহারা নুরইল জাহাদারপাড়ার আবু মুছা বলেন, ‘আজ সকাল ৮টা থেকে আলু নিয়ে বসে আছি। এখন দুপুর ১২টা বাজে। কেউ নিচ্ছে না। উৎপাদন খরচের অর্ধেক টাকাও উঠছে না আমাদের। মৌসুমের শুরুতেই যদি এমন দশা হয় তবে এরপর আরও যে কী হবে, তা আল্লাহই জানেন।’ 

বাজারে আলু বিক্রি করতে এসে ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না চাষিরাতানভীর ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঢাকার মোকামেই আলুর দাম কম। গত তিন দিনে আমি তিন লাখ টাকা লোকসান গুনেছি। আমদানি খুব বেশি হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’ 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় আলুর দাম সামান্য কমেছে। তা ছাড়া, শীতের কারণে বাইরের জেলার পাইকারেরা না আসায় দাম কিছুটা কমে গেছে।’ 

উপপরিচালক আরও বলেন, শীতের প্রকোপ কমে গেলে বাইরের পাইকার আসতে শুরু করবেন। এ ছাড়া বিদেশে যাঁরা আলু রপ্তানি করেন, তাঁরাও কিনতে শুরু করবেন। সেই সঙ্গে সংরক্ষণের জন্য হিমাগারগুলো আলু কেনা শুরু করলে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত