Ajker Patrika

তদন্ত প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষী বলছেন ঘটনাস্থলে ছিলেনই না

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৯: ৩১
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষী বলছেন ঘটনাস্থলে ছিলেনই না

রাজশাহীতে ভাঙচুর, চাঁদা দাবি ও লুটপাটের একটি মামলায় ১৬১ ধারায় সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে সাক্ষীর উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, যে সময়ের ঘটনা সে সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা কীভাবে এটি দিয়েছেন তা জানেন না তিনি।

মামলাটির তদন্তে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রাজশাহীর উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন। মামলার আরও দুই সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলে গোঁজামিল পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তদন্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ওই মামলার সাক্ষী রাজশাহী নগরীর দেবিশিংপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হাসান আলী। মামলার তদন্তের সময় তদন্ত কর্মকর্তা ১৬১ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। তারপর লিপিবদ্ধকারী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রের সঙ্গে সাক্ষীর জবানবন্দির একটি কপি আদালতে দাখিল করেছেন।

ওই কপিতে লেখা রয়েছে, হাসান আলী তাঁকে জানিয়েছেন যে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। ভাঙচুর করতে দেখেছেন। মামলার আসামি দুরুল হোদাকে বাদী আবদুল বারীর কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদাও চাইতে দেখেছেন।

তবে যোগাযোগ করা হলে হাসান আলী বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৪টার সময় ঘটনা। তখন সবাই বাড়িতে থাকে, আমিও বাড়িতে ছিলাম। ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তদন্ত কর্মকর্তা এটা কীভাবে দিয়েছেন তা জানি না।’

আহসাদ হাবিব রনি নামের আরেক সাক্ষীর জবানবন্দি হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা লিখেছেন, এই সাক্ষী বাদী আবদুল বারীর কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চাইতে দেখেছেন।

তবে যোগাযোগ করা হলে আহসাদ হাবিব রনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি চাঁদা দাবি করতে দেখেননি, শুনেছেন।

কত টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল সে প্রশ্নে হাসান বলেন, ‘আমি সেটা জানি না।’

এদিকে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ভাড়াটিয়া মিজানুর রহমানের দোকানের ৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছেন আসামিরা। তবে মিজানুর তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন, তিনি নিজেই তাঁর দোকান থেকে চাল বের করে নিয়ে যান। যোগাযোগ করা হলে মিজানুর বলেন, চাঁদা চাইতে তিনি দেখেননি। যা বলার আদালতে গিয়েই বলবেন।

দুরুল হোদার অভিযোগ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন প্রভাবিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। দুরুল ২০২২ সালে নগরীর সপুরা আহম্মদনগর এলাকায় লাকি বেগম নামের এক নারীর কাছ থেকে প্রায় সোয়া পাঁচ কাঠা জমি কেনেন। এই জমি নিজের বলে দাবি করে আসছেন বারী। তবে লাকি বেগমের নানি সাপিনা বেগম ২০১৫ সালে যখন এ জমির মালিক ছিলেন, তখনই আদালতে প্রমাণিত হয়েছিল যে জালিয়াতি করে বারী এই জমির খাজনা-খারিজ করেছিলেন নিজের নামে।

পরে সাপিনা বেগম তাঁর নাতনি লাকিকে এ জমি দেন। তারপর লাকি বিক্রি করেন দুরুলের কাছে। দুরুল তাঁর জমিতে থাকা দোকানপাট ভেঙে ফেললে বারী মামলা করেন। যদিও এখন জমির খাজনা-খারিজ দুরুলের নামে। এই জমির কাগজপত্র জমা দিয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) থেকে ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র নিয়েছেন। একতলা বাড়ি করে পেয়েছেন বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ পেতেও জমা দিতে হয়েছিল জমির কাগজপত্র। ই-পরচা ওয়েবসাইটেও রয়েছে দুরুলের নাম।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, আবদুল বারী ২০০৬ সালে এই জমির একটি দলিল বের করেন। এই দলিলে দেখা যায়, আবদুল বারী এবং তাঁর স্ত্রী সেলিনা বারী নাজির আহমেদ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন। নাজিরের বাবার নাম শেখ বসির আহমেদ। অথচ এই জমির আরএস খতিয়ানে দেখা গেছে, রেকর্ড অনুযায়ী মালিক সেখ হারুন ও তাঁর ভাই সেখ নাজির। দুজনের বাবার নাম সেখ মোহাম্মদ। সুতরাং, বারী ও তাঁর স্ত্রী যে নাজিরের কাছ থেকে জমি ক্রয় দেখাচ্ছেন আরএস খতিয়ানে তাঁর নামই নেই।

অথচ এ দলিল দিয়েই ২০০৭ সাল থেকে নিজের নামে জমির খাজনা দিতে শুরু করেছিলেন বারী ও তাঁর স্ত্রী। এ জন্য বারী বোয়ালিয়া ভূমি অফিসে সাকিনা বেগমের একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। সাকিনার টিপসই দেওয়া এই প্রত্যয়নপত্রে লেখা, এই জমি নিয়ে সাকিনার কোনো দাবি নেই। এর প্রেক্ষিতে সার্ভেয়ার সায়েম আলী বারীর খাজনা নেওয়ার সুপারিশ করেন। ফলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তখন বারী ও তাঁর স্ত্রীর খাজনা নেওয়ার অনুমতি দেন। 

 ২০১১ সালে সাকিনা বেগম খাজনা দিতে গেলে জানতে পারেন, এই জমির খাজনা নেওয়া হচ্ছে বারী ও তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে। এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে মামলা করেন। 

 ২০১৫ সালে মামলার রায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আতাউল গণি উল্লেখ করেন, শেখ হারুন ও শেখ নাজিরের কাছ থেকে ১৯৭৫ সালে এই জমি কিনে ভোগদখল করছেন সাকিনা বেগম। সিআইডির মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সাকিনার না-দাবির ব্যাপারে তাঁর যে প্রত্যয়নপত্র বারী দিয়েছেন সেই টিপসই সাকিনার নয়। 

তাই আদালত বারী ও তাঁর স্ত্রীর খাজনা বন্ধ করে সাকিনার নামেই খাজনা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি বারীর পক্ষে মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ায় আদালত ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সার্ভেয়ারের চাকরি চলে যায়। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আট বছর জালিয়াতির মাধ্যমে বারী ও তাঁর স্ত্রী জমির খাজনা দিলেও রায়ে সেটি অবৈধ প্রমাণিত হয়ে যায়। 

পরে লাকির কাছ থেকে জমি কিনে দুরুল বাড়ি করতে গেলে আবদুল বারী বাধা দেন। তার ওপর হামলাও হয় দুই দফা। এ নিয়ে বারী ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। দুরুল জমিটা কেনার আগে থেকেই সামনের অংশে পাঁচটি দোকানঘর ছিল। ভবন নির্মাণের জন্য দুরুল চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি দোকানগুলো ভেঙে ফেলেন। আর এই কারণে বারী এবার দুরুলসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এ মামলার তদন্তেই পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত