Ajker Patrika

লালপুরে কয়লার সংকটে ইটভাটায় অনিশ্চয়তা

ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর)
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৫০
লালপুরে কয়লার সংকটে ইটভাটায় অনিশ্চয়তা

হঠাৎ করে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ইটভাটার মালিকেরা বিপাকে পড়েছেন। ফলে নাটোরের লালপুরের ৩৬টি ভাটায় কর্মরত প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেক ভাটা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া কয়লার দাম না কমলে ঠিকাদাররা মৌসুমে ইটের দাম বাড়ার শঙ্কায় রয়েছেন। 

আজ বুধবার উপজেলার ইটভাটাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটায় সারি সারি কাঁচা ইট শুকিয়ে গাদা দিয়ে রাখা হয়েছে। ইট পোড়ানোর জন্য ভাটার চুলা প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু কয়লার দাম বাড়ায় অনেকে ভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে লাখ লাখ কাঁচা ইট তৈরি করা হলেও কয়লার দাম বাড়ায় পোড়াতে পারছেন না। গত নভেম্বর মাসের আগেই ইট পোড়ানোর সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছিল। কিন্তু কয়লার সংকটে এখন পর্যন্ত পোড়ানোর কাজ করা সম্ভব হয়নি। 

ইটভাটার শ্রমিক আলেক আলী বলেন, `ছোটবেলা থেকেই ইটভাটার কাজ করছি। প্রতিবছর ইট পোড়া মৌসুমে তিন-চার মাস কাজ করে সারা বছর সংসার চালাই। অভাবের সময় কাজ করে পরিশোধের চুক্তিতে ভাটার মালিকদের কাছ থেকে অনেকেই অগ্রিম টাকা নিয়েছেন। চলতি বছর এখনো ভাটায় কাজ শুরু না হওয়ায় পরিবার নিয়ে মহাবিপদে পড়ব বলে চিন্তায় পড়েছি।' 

নির্মাণকাজের ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বলেন, নতুন ইটের অপেক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চলছে। কয়লার কারণে ইটের দাম বাড়ায় প্রকল্পব্যয়ও বাড়বে। তার পরও নতুন ইট কবে পাবে তারও ঠিক নেই। কারণ বাজারে এখন ইটের সংকট দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া ইটের কারণে নতুন বাড়ি তৈরিতে খরচ বেড়ে যাবে।

বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ইটভাটামঞ্জিলপুকুরের ভিআইপি ভাটার মালিক মো. নিপুন বলেন, `আমিসহ আরেকটি ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। গত বছর সর্বশেষ ৮ হাজার টাকা টন কয়লা কিনে ১ হাজার ইট সাড়ে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এ বছর সাড়ে ১৯ হাজার টাকা টন কয়লা কিনেছি। প্রতি ১ হাজার ইট ৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি। তার পরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে লাভের মুখ দেখব না। অগ্রিম টাকায় ইট বিক্রি করায় ভাটা চালাতে বাধ্য হয়েছি। এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সংশয় দেখা দিয়েছে।'

ভিএসএল ইটভাটার মালিক মো. খায়রুল বাসার ভাদু বলেন, `প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু এবার এখনো কয়লা জোগাড় হয়নি। এ অবস্থায় কবে নাগাদ ভাটা চালু করতে পারব তা নিয়ে হতাশায় রয়েছি।'

রামকৃষ্ণপুরের এমএইচকে ভাটার মালিক মো. আবু বকর সিদ্দিক পলাশ বলেন, উপজেলার ৩৬টি ইটভাটায় প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কয়লার দাম বাড়ায় ভাটা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শ্রমিকেরা সংকটে পড়েছেন। এতে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। 

ঠিকাদার ও ভাটার মালিক মো. হাসেম আলী বলেন, সারা দেশে অবকাঠামো নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হয় বিপুল পরিমাণ ইট। আমদানি করা কয়লার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ইটের বাজারে। উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি মৌসুমের শুরুতে এ বছর ইটের দাম ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচসহ সিমেন্ট, রড ও অন্যান্য কাঁচামালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। দাম বাড়ায় ইটভাটায় যথাসময়ে উৎপাদন শুরু করতে পারছেন না। গত মৌসুমে উৎপাদিত ইটের মজুতও শেষ হয়ে গেছে। 

লালপুরের কয়লা সরবরাহকারী মো. আলাউদ্দিন বলেন, এ বছর যশোর থেকে আনা কয়লার মান অনুযায়ী ১৮ থেকে ২১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে গাড়িভাড়াও আলাদাভাবে নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত