Ajker Patrika

বর্ষায় চলনবিলে হরেক প্রজাতির দেশি মাছ

রফিকুল ইসলাম, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২১, ১১: ৫১
বর্ষায় চলনবিলে হরেক প্রজাতির দেশি মাছ

ভারী বর্ষণ আর জোয়ারের পানি আসতে শুরু করেছে চলনবিলে। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভরে উঠেছে চলনবিলের ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত খাল-বিল। নতুন পানির সঙ্গে আসছে শোল, বোয়াল, ট্যাংরা, পুঁটি, কই, শিং, মাগুর, চাপিলা, পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ।

সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের মৎস্যজীবী আসলাম হোসেন বলেন, চলনবিলের খাল ও নিম্নাঞ্চলে বর্ষার পানি আসতে শুরু করেছে। আর কদিন পরে পুরো বিল পানিতে ভরে উঠবে। নতুন পানির সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ দেখা যাচ্ছে। 

বিলপাড়ের লোকজন বর্ষার আগমনে আলাদা আলাদা পেশা বেছে নিচ্ছেন। কেউ নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহন করবেন, কেউ বা করবেন মানুষ পারাপার। কেউ আবার নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করবেন। এ ছাড়া কেউ মাছ শিকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল বানিয়ে বিক্রি করছেন স্থানীয় হাট-বাজারে। 

সরেজমিনে চলনবিল ঘুরে দেখা যায়, তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের মাকোঁড়শোন গ্রামে বর্ষা সামনে রেখে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঠমিস্ত্রিরা।

উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের মাকোঁড়শন গ্রামের কাঠমিস্ত্রি সোহান হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে বিলের দুর্গম এলাকাগুলোর পথঘাট পানিতে ডুবে যায়। এসব এলাকার মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরায় তখন একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে নৌকা। এবার নৌকার চাহিদা একটু বেশি মনে হচ্ছে। তাই অনেকেই বর্ষা আসার আগেই নৌকা মেরামত ও তৈরির কাজ করছেন। আমরা পুরোনো নৌকা মেরামতের পাশাপাশি নতুন নৌকাও বানাচ্ছি।

চলনবিলের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈর হাটে জাল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিলপাড়ের মৌসুমি মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার জাল কেনাবেচার হিড়িক। এখানে মাছ শিকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল বিক্রি হচ্ছে। বাদাই, কারেন্ট, ফাঁসি, চায়নানেট, তেউরিসহ নানা ধরনের জাল বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিক্রি হচ্ছে দেশে তৈরি কোঁচ, জুতি, টেঁটা, চাঁই, খৈলশানী, দোয়ার ও ভাইর।

তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের ভেঁটুয়া গ্রামের জহির উদ্দিন বলেন, বর্ষার মৌসুমে চলনবিল এলাকায় তেমন কোনো কাজকর্ম থাকে না। তাই এ সময় বিলপাড়ের গরিব লোকজন মাছ ধরার পেশাকে বেছে নেয়।

তাড়াশ উপজেলার বৃহৎ মহিষলুটি মৎস্য আড়ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিসমত আলী দুলু বলেন, চলনবিলের খাল-বিল ও মাঠে আসতে শুরু করেছে বর্ষার পানি। আর ওই বর্ষার পানির সঙ্গে আসা দেশি প্রজাতির নতুন নতুন মাছ মৎস্যজীবীরা ধরে এ আড়তে বিক্রির জন্য এনেছেন।

তবে ডিমওয়ালা মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও একশ্রেণির অসাধু ও শৌখিন মৎস্যজীবী অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ধরছেন। ডিমওয়ালা মাছ ধরা ঠেকাতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ। 

মশগুল আজাদ বলেন, চলনবিলের খাল-বিল বর্ষার পানিতে ভরে উঠতে শুরু করেছে। পানির সঙ্গে সঙ্গে দেশি প্রজাতির ছোট-বড় ও ডিমওয়ালা মা মাছও আসছে। রেণু পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন ঠেকাতে চলনবিলের তাড়াশ অংশে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জুন-জুলাই মাসে ডিম ছাড়ে মা-মাছগুলো। এই সময়টাতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ১৯৫০ সালের মৎস্য আইন অনুযায়ী ডিম এবং মা-মাছ শিকার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।  
 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত