Ajker Patrika

গানই আরজ আলীর জীবিকা

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
গানই আরজ আলীর জীবিকা

এক হাতে একতারা আরেক হাতে খঞ্জনী। সঙ্গী বা ভঙ্গি কিছুই নেই। আছে শুধু শ্রুতিমধুর কণ্ঠ। আর সেই শ্রুতিমধুর কণ্ঠকে একতারার সুরের সঙ্গে মিলিয়ে গাইছে গান। এই গান শুনে জড়ো হয় ঘুরতে আসা লোকজন। গানে মুগ্ধ হয়ে ১০-২০ টাকা করে বকশিশ দেন তারা। দিন শেষে যা পায় তা দিয়েই চলে আরজ আলী বাউলের সংসার।

প্রতিদিনেই আরজ আলী বাউলের দেখা মিলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে যা কোহিনুর টিলা নামে পরিচিত। পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিনেই হাজারো পর্যটকের আনাগোনা। ঘুরতে আসা ওই পর্যটকদের গান শুনিয়ে মাতিয়ে তোলাই হচ্ছে আরজ আলীর পেশা।

দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের বালিচান্দা গ্রামের বাসিন্দা আরজ আলী। একমাত্র স্ত্রীকে নিয়েই ৬২ বছর বয়সী আরজ আলীর বর্তমান সংসার। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। অনেক কষ্টে দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। ছেলেও বিয়ে করে জীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরে চলে গেছেন। তাই ছেলে মেয়েরা তেমন খোঁজ নেন না।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে গেলে দেখা যায় আরজ আলীকে। তার গান শুনতে চারপাশ ভিড় জমিয়েছে পর্যটকেরা। আসরও জমিয়েছে বেশ। গান শেষ হতেই আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আরজ আলীর।

আরজ আলী বলেন, ‘নবীর শিক্ষা করিও না ভিক্ষা। আমাদের নবী ভিক্ষা পছন্দ করতেন না। তাই আমিও ভিক্ষা করি না। আল্লাহ গলায় ভালো কণ্ঠ দিয়েছে। তাই কণ্ঠ বিক্রি করেই বাঁচি। মানুষ আমার কণ্ঠে গান শুনে খুশি হয়ে যা দেয় তা দিয়েই আমার সংসার চালায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জন্মের আড়াই বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। কিছু বুঝে ওঠার আগে হারিয়েছি মাকেও। তাই জন্মের পর থেকেই আমি হতভাগার মতো। জীবনে বেশি কিছু চাওয়া নাই আমার। বাকি জীবনটা গান গেয়েই কাটাতে চাই।’

ঘুরতে এসে গানের আসরে অংশ নেওয়া ফয়েজ আহম্মদ হৃদয় বলেন, ‘আমরা চীনামাটির পাহাড়ে ঘুরতে এসে গান প্রেমী আরজ আলীকে পেলাম। যারা যারা এখানে ঘুরতে এসেছেন সবাইকেই তিনি গান শুনিয়ে আনন্দে মাতিয়ে রাখেন। আমরাও তাঁর গান শুনে আনন্দ পেয়েছি। আমি মনে করি এই সৌন্দর্যসময় স্থানকে তিনি গানে গানে আরও ফুটিয়ে তুলেছে।’

দুর্গাপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক তোবারক হোসেন খোকন বলেন, ‘আরজ আলী খুবই প্রতিভাবান শিল্পী। তিনি যে কারও নাম বা স্থান নিয়ে তাৎক্ষণিক গান বানিয়ে ফেলতে পারেন। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে আরজ আলীর সাংস্কৃতিক প্রতিভা। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমেই কেবল তাঁর প্রতিভা রক্ষা করা সম্ভব। আমি চাই সরকার থেকে তাকে সহযোগিতা করা হোক তাতে তার প্রতিভা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘জানতে পেলাম বাউল আরজ আলী পর্যটকের গান শুনিয়ে আনন্দ দেন। তার সঙ্গে আমার এখনো পরিচয় হয়নি। তবে তাঁর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে কথা বলব। অন্যদিকে পর্যটন এলাকাগুলো নিয়ে আমাদের নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। অচিরেই তা বাস্তবায়ন হবে।’

 ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে আরজ আলী সাত হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। তা ছাড়াও তার গান শুনে বিমোহিত হয়ে জেলা প্রশাসক নতুন একটি বেহালা উপহার দিয়েছিলেন তাঁকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত