Ajker Patrika

দেওয়ানগঞ্জে এসআইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ৩২
Thumbnail image

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ নামের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণসহ রিমান্ডে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের রেঞ্জ ডিআইজিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল রাতে ইউনিয়নের মিতালী উচ্চবিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থেকে সরকারি বরাদ্দের ১২টি ল্যাপটপ চুরি হয়। এ নিয়ে ১৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন। মামলা করার পেছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি বকুল ইসলাম মেম্বার। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ।

গত ২২ এপ্রিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস এবং পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিব সাত্তীসহ এসআই হাবিবুল্লাহ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। এ সময় বকুল মেম্বারকে হাবিবুল্লাহ বলেন, চোর শনাক্ত করতে ছয় হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আগামীকাল থেকে চোর গ্রেপ্তারসহ ল্যাপটপগুলো উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে। এ জন্য টাকা প্রয়োজন। এ সময় এসআই হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা দেন বকুল মেম্বার।

দুই দিন পর চোর গ্রেপ্তার না করে উল্টো মামলার বাদী প্রধান শিক্ষক নিজেই চুরির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন এসআই হাবিবুল্লাহ। সে কারণে প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে বকুল মেম্বারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে প্রধান শিক্ষককে মামলায় ফাঁসানোরও হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে এসআই হাবিবুল্লাহকে ৪০ হাজার টাকা দেন বকুল মেম্বার।

এ ছাড়া চোরকে গ্রেপ্তার করতে খরচ বাবদ এসআই হাবিবুল্লাহ তাঁর বিকাশ অ্যাকাউন্টে দুই দফায় বকুল মেম্বারের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নেন। সব মিলিয়ে নেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। গত ২ মে সকালে মামলার সাক্ষী ও বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী মো. লিটন মিয়াকে থানায় ডেকে নিয়ে ল্যাপটপগুলো মামলার বাদী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম ও বকুল মেম্বার চুরি করেছেন, এই স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করেন এসআই হাবিবুল্লাহ। পরদিন সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে লিটনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

১৩ মে লিটন মিয়াকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়। রিমান্ডে লিটনের চোখ-হাত বেঁধে ব্যাপক মারধর করা হয়। পুলিশি নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে বকুল মেম্বারের কাছ থেকে এসআই হাবিবুল্লাহ আরও ৪০ হাজার টাকা নেন। এ অবস্থায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। তা ছাড়া মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করতে এসপি বরাবর আবেদন করা হয়।

ভুক্তভোগী লিটন মিয়া বলেন, ‘আমার কোনো দোষ ছিল না। কিন্তু রিমান্ডে নিয়ে এসআই হাবিবুল্লাহ আমাকে ব্যাপক নির্যাতন করেছেন।’

এসআই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীতমামলার বাদী ও মিতালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা করে উল্টো আমরা থানা-পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছি। দফায় দফায় ঘুষ দিয়েও পুলিশের হয়রানি থেকে মুক্তি মেলেনি।’

অভিযোগকারী ও ইউপি সদস্য বকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুষ নিয়েও উল্টো আমাদের নির্যাতন করেছে এসআই হাবিবুল্লাহ। সে কারণেই আইনি প্রতিকার পেতে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

তবে এসআই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ দাবি করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। কেন এই অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা–ও জানি না।’ 

দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমার কাছে তেমন কিছু বলেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেওয়ানগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন কান্তি চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত এসআইয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত