Ajker Patrika

পঞ্চাশ বছর ধরে বাদুড়ের বসত

মো. জাকিরুল ইসলাম, হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) 
পঞ্চাশ বছর ধরে বাদুড়ের বসত

উঁচু গাছের মগডালে বাদুড়ের ঝুলে থাকা একসময় ছিল গ্রামগঞ্জের স্বাভাবিক দৃশ্য। রাতের বেলায় ভয় জাগানো আঁধারে হঠাৎ কিচিরমিচির ডাকে বাদুড়ের ওড়াউড়ি আতঙ্ক আরও বাড়াত। এখন গ্রামের পর গ্রাম ঘুরলেও দেখা মেলে না উড়তে জানা একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীটির। গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়া আর খাবারের সংকটের কারণে বাদুড় আজ বিলুপ্তপ্রায়, বলছেন গবেষকেরা। কিন্তু ব্যতিক্রম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সন্ধ্যাকুড়া এলাকা। এখানে হাজার দু-এক বাদুড়ের বসতি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি। বাদুড়ের ওড়াউড়ির শব্দ না শুনলে যেন ঘুম আসে না গ্রামবাসীর।

কোত্থেকে এল এত বাদুড়, এমন প্রশ্নের জবাবে বাঁশঝাড়ের মালিক বিজয় রিছিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, বছর পাঁচেক ধরে এরা স্থায়ীভাবে এখানেই আছে। তার আগে দীর্ঘ সময় তারা আসা-যাওয়াতেই ছিল। অর্থাৎ একবার গেলে খবর থাকত না বছর, দু বছর। আবার দলবেঁধে হাজির এক সময়।

প্রবীণ গ্রামবাসী আবদুর রহিম জানালেন, প্রায় পঞ্চাশ বছর এসব বাদুড় আছে বাঁশবাগানে। এক সময় আরও বেশি ছিল। এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার পথ পেরোলেই জয়রামকুড়া মিলন বাজার। বাজার পেরিয়ে সামনে গেলেই সুনসান নীরবতায় গ্রাম সন্ধ্যাকুড়া, যেখানে মুসলিম আর গাড়ো মানুষদের সম্প্রীতির বসবাস। এই বসতির এক একর জায়গাজুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল বাঁশঝাড়, যাতে আস্তানা গেড়েছে দেখতে কুৎসিত প্রাণীগুলো। বাঁশের পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা শত শত বাদুড় দেখে মনে হয় অজ্ঞাতনামা কোনো ফল ধরেছে এসব বাঁশগাছে। 
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকাটি নিরিবিলির, আর লোকজনও এসব বাদুড়কে কোনো ধরনের খোঁচাখুঁচি করে না। আশপাশে বেশ ফল-ফলাদি গাছও আছে। কাছাকাছি জায়গায় খাবার পাওয়া যায়, তাই এরা আর এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে না। সন্ধ্যা হলেই দলে দলে ছুটে যায় তারা খাবারের সন্ধানে। ঘুরে বেড়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়, চলে দূর-দূরান্তে। বাঁশঝাড়ে পাতার ফাঁকে বাঁশের কঞ্চিতে হুকের মতো পা দুটো আটকে নিস্তব্ধতায় ঝুলতে দেখা যায় দিনের বেলায়। দেখে মনে হবে, রাতের শ্রমে ক্লান্ত হয়ে তারা যেন একটু প্রশান্তির ঘুম খুঁজছে। নিশাচর এই প্রাণীর আবাসস্থলটি যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।

ভোরের আলো ফোটার আগেই দলবেঁধে আবার বাঁশঝাড়ে ফিরতে শুরু করে এই স্তন্যপায়ী প্রাণী। আবারও কোলহলপূর্ণ হয়ে ওঠে কিচিরমিচির শব্দে চারপাশ। দেখে মনে হয় এ যেন বাদুড়দের এক রাজ্য। আর বাঁশঝাড়ে একটু শব্দ হলেই কিচিরমিচির শব্দে খোলা আকাশে দলবেঁধে উড়তে থাকে তারা। সারা বছর এখানে নিশ্চিন্তে বাস করে বাদুড়েরা।

তবে উদ্বেগের কথাও শোনা গেল স্থানীয়দের মুখে। এলাকায় লিচু, আম, বরই ইত্যাদি মৌসুমি ফলের সময় বাদুড় বা অন্য পাখি থেকে ফল রক্ষা করতে গাছের চারপাশে বিশেষভাবে তৈরি করা জালের ফাঁদ পাতা হয়। এতে অন্য পাখির সঙ্গে প্রচুর বাদুড়ও ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়। রয়েছে কীটনাশকের প্রভাবও। সব মিলিয়ে বাদুড় ও বিভিন্ন পাখির জন্য এগুলো ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা কবি পরাগ রিছিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাদুড় মানবকল্যাণকারী ও পরিবেশবান্ধব একটি প্রাণী। এরা মানুষের উপকারই করে থাকে। বিশেষ করে কলা ও অ্যাভোকাডোসহ প্রায় ৩০০ রকমের গাছের বীজ ছড়াতে সাহায্য করে এরা। আবার কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে। তাই বাদুড় রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

‘হালুয়াঘাট দর্পণ’ সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাদুড় নিয়ে আমাদের মাঝে কল্পকাহিনি আর কুসংস্কারের শেষ নেই। মানুষের প্রতিকূলতার মধ্যেও জয়রামকুড়া গ্রামের বিজয় রিছিলের বাড়ির নিভৃত বাঁশঝাড়ে নির্ভয়ে আবাস গড়ে তুলেছে শত শত বাদুড়। এগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এ জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ খুবই জরুরি।’

আনন্দমোহন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই বাদুড় থাকতে ভালোবাসে। বাদুড়কে অনেক সময় ক্ষতিকর প্রাণী মনে করা হলেও আসলে এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় প্রাণী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত