Ajker Patrika

ঢলের পানিতে বন্দিজীবন

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৫: ৩৪
ঢলের পানিতে বন্দিজীবন

গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে পানি নেমে গেলেও ভাটিতে থাকা পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কংস, বোররঘাট, শেওলা, মেনংছড়া, দর্শা, গাংগিনা নদীর কয়েকটি স্থানে ছোট-বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার থেকে উজানের পানি ভাটিতে নেমে নড়াইল ইউনিয়নের পূর্ব নড়াইল, খড়মা, শিবধরা, গোপীনগর, বটগাছিয়াকান্দা কাউলিয়াজান, বিলডোরা ইউনিয়নের আলিশা, নিশ্চিন্তপুর, ধুরাইল ইউনিয়নের গোরকপুর, চরগোরকপুর, পাবিয়াজুরী, কন্যাপাড়া, জৈতক ও ডোবারপাড়, আমতৈল ইউনিয়নের আমতৈল বাহিরশিমুল এলাকা ও ধারা ইউনিয়নের গাংগিনা, বাহিরশিমুল এলাকাসহ কয়েকটি নিচু এলাকার বসবাসরত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি থেকে বের হতে বিকল্প হিসেবে নৌকা বা কলাগাছের ভেলা ব্যবহার করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এ ছাড়া নড়াইল ইউনিয়নের গোপীনগর থেকে মেকিরকান্দা যাতায়াতের সড়কে সোবাহান মেম্বারের বাড়ির পাশে ভেঙে যাওয়া ব্রিজ মেরামত না করায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

নিশ্চিন্তপুর এলাকার গৃহবধূ কুলছুম বলেন, ‘দুই দিন ধইরা বাড়ির চারপাশে পানি। বাড়ি থাইকা বাইর (বের) অওনের তো কোনো উপায় নাই। পুলাপাইন স্কুলে যায় নৌকা দিয়া, ডর লাগে। পানি বাড়ায় আমারা কষ্টে আছি।’

গোপীনগর এলাকার কৃষক আমির উদ্দিন বলেন, ‘এহন পানি দম ধইরা আছে। আমরার নামার মাইনসের কষ্টের শ্যাষ নাই। উজানের সব পানি আমাগো এহনে ঠেহে। নামতে সময় লাগে ম্যালা দিন। রাস্তায় পানি থাহায় চলাচল করা কষ্ট। বাজারে গেলে নাও (নৌকা) লাগে।’ 

আজ বুধবার উপজেলার নড়াইল, ধারা, ধুরাইল, বিলডোরা ও আমতৈল ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে উজানের পানি নেমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এসব ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের পুকুরে চাষ করা মাছ ভেসে গেছে পানিতে। এ ছাড়া কিছু কাঁচা সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
 
বাজারে ধান বিক্রি করার জন্য প্রথমে নৌকা পরে ইঞ্জিন চালিত ট্রলিতে তুলছেন কৃষকেরাবাজারে ধান বিক্রি করতে প্রথমে নৌকায় পরে ইঞ্জিনচালিত ট্রলিতে তুলতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নড়াইল ইউনিয়নের বটগাছিয়াকান্দা এলাকার কৃষক জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘চারদিকে পানি। হাতে টেহা-পয়সাও নাই। জমির ধান শান্তিতে বাজারে নিয়া বেইচা বাড়ি ফিরুম, হেই অবস্থাও নাই। বাধ্য অয়া তিনজনে নৌকা ভাড়া কইরা ধান এই পর্যন্ত আনছি। এহন আবার ট্রলি কইরা বাজার পর্যন্ত নেওন লাগব। ধান বাজারে নিতে মণপ্রতি খরচ যাইব ৫০ টেহা। আমারা কৃষকেরা খুব কষ্টে আছি।’ 

এ বিষয়ে নড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন মানিক বলেন, ‘উজানের পানি ভাটিতে নেমে আসায় নতুন করে আমার ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি গ্রামের কাঁচা সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি রাস্তা ও সেতু প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতা করা হবে। তবে পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত