চিরকুট লিখে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা: ধর্ষণের দায় স্বীকার অভিযুক্ত তামিমের

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় চিরকুট লিখে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে। এরপর ওই শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত তামিম আহমেদ স্বপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তামিম ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার অষ্টধার ইউনিয়নের চরশশা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তামিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১৪। এরপর গতকাল শনিবার দুপুরে তামিমকে মেলান্দহ থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব। 

পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি তামিম আহমেদ স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ধর্ষণের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) দিলীপ চন্দ্র সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থানায় তামিম আহমেদ আহমেদ স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মেয়েটির সঙ্গে করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর প্রথম যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয় তাঁর কিছুদিন পরেই মেয়েটির সঙ্গে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে মেয়েটি সঙ্গে ফোনে কথা বলত। মেয়েটার সঙ্গে সেই দিন ছিল তামিমের প্রথম দেখা। ওই দিন প্রথমে ওই মেয়েটাকে নিয়ে রিকশা দিয়ে দুজন ঘুরে বেড়িয়েছেন। তারপর কৌশলে মেয়েটিকে তামিম আহমেদ (স্বপন) তাঁর পরিচিত এক বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন।’ 

• ‘আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের সম্মান শেষ হয়ে যেত’

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ময়নুল ইসলাম, ‘থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সব দোষ স্বীকার করেছেন আসামি তামিম আহমেদ স্বপন। এরপর তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।’ 

ওসি বলেন, ‘আদালতে প্রেরণের পর বিচারক ফারিয়া আরজুর সামনেও সব দোষ স্বীকার করে আসামি। তাই সেখানে রিমান্ড চাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় নাই। এরপর আসামিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয় আদালত।’ 

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি তামিম আহমেদ স্বপনের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে উপজেলা বালুআটা এম এ রশীদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন করেন। 

• চিরকুট লিখে স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় সেই তামিম গ্রেপ্তার

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, দোষীদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে কোনো অপরাধী এমন ধরনের কাজ না করতে পারে। এ রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে এবং কোন সহপাঠীকে যেন এভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়। আমরা যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারি। নিহত ওই স্কুলছাত্রী আমাদের বিদ্যালয়ের পাশের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে অনেক সময় বখাটেদের উৎপাত লাখ করা যায়। বখাটেদের উৎপাত রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সোচ্চার থাকতে হবে। 

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মেলান্দহ উপজেলায় চিরকুট লিখে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে দুটি চিরকুটে ওই শিক্ষার্থী লেখে, ‘মা, আমারে ওয়াহাব চেয়ারম্যানের ভাতিজা আজকের দিনে এক রুমে কাটাইছে। পারলে ক্ষমা করো। যদি কোনো বিচার করো ছেলেটার নাম তামিম আহমেদ শপন খান। মা-বাবা তোমরা ভালো থেকো। আমারে ভুলে যেও। আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের সম্মান শেষ হয়ে যেত। বাবা-মা আবার বলতাছি, ভালো থেকো। বাবা-মা ভালো থেকো। গুড বাই, সোনা বাবা-মা।’