Ajker Patrika

আতঙ্ক নিয়ে হোস্টেলে বসবাস, নতুন ভবনের দাবি

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১২: ১৬
আতঙ্ক নিয়ে হোস্টেলে বসবাস, নতুন ভবনের দাবি

প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো জমিদারবাড়িতে গড়ে ওঠা গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের হোস্টেলটি কেবল জরাজীর্ণই নয়, অদ্ভুত ভুতুড়ে পরিবেশের রূপ নিয়েছে। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছেন দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিতল ভবনের নিচতলার একাংশে কলেজ ও অধ্যক্ষের কার্যালয়। বাকি অংশ ও দ্বিতীয় তলার পুরোটাই আগে ছিল হোস্টেল, এখন দ্বিতীয় তলায় মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী আছেন। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হোস্টেলে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর কাছে ফিরে আসা। দ্বিতীয়তলার কংক্রিটের বারান্দা ও মূল ভবনের কাঠের পাটাতনে জায়গায় জায়গায় ফাটল। দেয়ালের প্লাস্টার খসে যাচ্ছে। দরজা-জানালা ভাঙা। পাটাতন ও ছাদেও বার্ধক্যের চিহ্ন। জরাজীর্ণ বাথরুমের পাইপগুলো ভাঙা। গোসল করতে হয় নিচে নেমে টিউবওয়েলে। খাবারের পানির ব্যবস্থা নেই, আনতে হয় নিচ থেকে। কলেজ ছুটির পর পরিত্যক্ত জমিদারবাড়ির সুনসান নিস্তব্ধতা মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ছড়িয়ে থাকে সর্বত্র। 

জানা যায়, গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি (অনার্স) কলেজটি ১৯৮১ সালে পরিত্যক্ত জমিদারবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি ও অনার্স মিলে ১ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, বাংলা ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে অনার্স চালু রয়েছে। আরও কয়েকটি বিষয়ে অনার্স চালু প্রক্রিয়াধীন। অথচ শিক্ষার্থীদের থাকার নেই কোনো সুব্যবস্থা।

ইতিহাস বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কবিতা আক্তার। বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার হলিদাকান্দা গ্রামে। তিনি এই হোস্টেলে দুই বছর যাবৎ থাকেন। কবিতা জানান, অনেক দূর থেকে তিনি এসেছেন। গৌরীপুরে কোনো আত্মীয়স্বজন নেই, তাই শত প্রতিকূলতার মাঝে অনেকটা বাধ্য হয়েই এখানে থাকতে হচ্ছে। তা ছাড়া মেয়ে হিসেবে বাইরের ভাড়া বাড়িতে একা থাকার চেয়ে হোস্টেলে থাকাটাই তিনি নিরাপদ মনে করেন। 
 
মূল ভবনের কাঠের পাটাতনে জায়গায় জায়গায় ফাটল। দেয়ালের প্লাস্টারও খসে যাচ্ছেমনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী পিংকি আক্তার এসেছেন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাটগাঁও গ্রাম থেকে। সম্প্রতি তিনি হোস্টেলে উঠেছেন। অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন হোস্টেলে থেকে প্রচুর পড়াশোনা করবেন। এখন ভয় আর আতঙ্কে সময় কাটছে। হোস্টেলটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এমন ভুতুড়ে পরিবেশ হতে পারে তা তিনি কখনো কল্পনাও করতে পারেননি বলে জানান। 

হোস্টেলের পরিচালক অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, ‘অনার্স লেভেলে অনেক দূরদূরান্তের শিক্ষার্থী রয়েছে কলেজে। তারা হোস্টেলে থাকতে আগ্রহী। কিন্তু জরাজীর্ণ ভবনে থাকতে ভয় পায়। কলেজের আর্থিক সামর্থ্য নেই নতুন হোস্টেল ভবন নির্মাণ বা এটা মেরামতের। চার-পাঁচ বছর আগেও হোস্টেলে ১৫০ জন ছাত্রী থাকত।' 

গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন জানান, প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ভবনটি এখন ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। মেয়েরা অনেক কষ্টে এখানে থাকছে। কলেজের আর্থিক সামর্থ্য নেই নতুন ভবন নির্মাণের। তিনি সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন। 

প্রাবন্ধিক ও গবেষক রণজিৎ কর জানান, ১৮০০ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বর্তমান গৌরীপুর মহিলা কলেজের হোস্টেল ভবনটি জমিদারবাড়ির অন্দরমহল হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তাঁরা ভারতে চলে গেলে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল এটি। পরে মহিলা কলেজ করা হয়।  এই ভবন এখন আর বসবাসের উপযোগী নয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত