Ajker Patrika

কৈশোর থেকে তাঁর নিত্যসঙ্গী একতারা আর দারিদ্র্য

মেলান্দহ (জামালপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

পরনে সাদা পাঞ্জাবি–পায়জামা, মাথায় হলুদ পাগড়ি। একতারা বাজিয়ে শরীর দুলিয়ে গলা ছেড়ে গাইছেন—‘কেন যে মওলা আমায় বাউলা বানাইল’। তাঁকে ঘিরে বিভিন্ন বয়সী শ্রোতা। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছেন ষাটোর্ধ্ব শিল্পীর গান। গান শেষ হতেই মুহুর্মুহু করতালি। তিনি জামালপুরের মেলান্দহের বাউল মো. মতিউর রহমান। যাকে মতি বাউল নামেই চেনেন স্থানীয়রা। 

উপজেলার রায়ের বাকাই গ্রামে জন্ম মতি বাউল। ঘুরে বেড়ান জেলাজুড়ে। বাউল গান আর পালা গান পরিবেশন করেন তিনি। এটিই তাঁর পেশা, এটিই নেশা।

ছোটকাল থেকে রেডিওতে গান শোনার নেশা ছিল তাঁর। গাইতেনও গুন গুন করে। একদিন পালাগানের আসরে দেখা হয়ে চাঁন বয়াতির সঙ্গে। চাঁন বয়াতির নজরে পড়েন তিনি। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন গানের আসর যেতেন মতি। একপর্যায়ে চাঁন বয়াতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন, হাত তুলে নেন একতারা। এভাবেই শুরু। কিশোর মতিউর হয়ে ওঠেন বাউল মতি। 

ভালো লাগার গানকেই এক সময় উপার্জনের হিসেবে বেছে নেন মতি বাউল। গান গেয়ে যে বকশিশ পান, তা দিয়েই কোনোরকমে চলে সংসার। আর্থিক টানাপোড়েন লেগেই থাকে। 

বাউল মতির সঙ্গে একটি গানের আসরে দেখা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁর জীবনের গল্প শোনান তিনি। বাউল মতি বলেন, ‘কিশোর বয়স থেকেই গান শুরু করেছিলাম। এখনো গান গেয়ে যাচ্ছি। জীবনে গান ছাড়া আর নেই কিছুই। যেভাবে চলছে, এভাবেই হয়তো চলবে। তবে লোকজন এখন আর গান শুনে তেমন পয়সা দেয় না।’ 

বাউলের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, ‘গান গেয়ে যে টাকা বকশিশ হয়, তা দিয়েই চালাতে হয় সংসার। এ ছাড়া তো সংসারে আয় রোজগার করার মতো কেউ নেই। ছোট ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছি, তাকে নিয়ে এখন আমাদের স্বপ্ন। ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারলে সে যেন আমাদের একটুখানি দেখে—এটাই আশা।’ 

একতারা বাজিয়ে গান গাইছেন বাউল মতিউর রহমান খান মতিরায়ের বাকাই এলাকায় ব্যবসায়ী মন্টু মিয়া বলেন, ‘বাউল মতি সম্পর্কে আমার চাচা হন। আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখছি মতি চাচা গান গেয়ে ঘুরে বেড়ান। সকাল বেলা একটি ব্যাগ ও হাতে একতারা নিয়ে অজানা উদ্দেশে বের হন। কষ্টের মধ্যেই আছেন তিনি।’ 

গান গেয়ে উপার্জিত অর্থে তিন সন্তানকে বড় করেছেন বাউল মতি। দুই মেয়ে ও এক ছেলে তাঁর। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে নবম শ্রেণিতে। এখন আশায় বুক বেঁধে আছে, ছেলে বড় হয়ে তাঁর সংসারের হাল ধরবে। তবে সে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না জানেন না। 

একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাউল বলেন, কৈশোরে যে গান দিয়ে শুরু করেছিলেন জীবনের পথচলা, জীবনের শেষ বেলায়ও সেই গানই তাঁর পাশে আছে। গান ছাড়া কিছু নেই তাঁর। এর মাঝেই গলা ছেড়ে গান ধরেন—‘সে জানে আর আমি জানি, আর কে জানবে মনের কথা।’ 

বাউল মতিউর রহমানের কথা জানানো হলে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত