Ajker Patrika

মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে চলা অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্বস্তি। আজ শনিবার বেলা ৩টায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে এটি দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। একই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ২৩ শতাংশে নেমে আসায় গরমের প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কে গলে গেছে রাস্তার পিচ। হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। বিভিন্ন খামারে গবাদিপশু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, শিগগির মিলছে না স্বস্তি। আরও কয়েক দিন থাকতে পারে এই তাপপ্রবাহ।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গত শুক্রবার (৯ মে) বেলা ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ মে) চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূচক অনুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৩৯.৯ মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ তীব্র তাপপ্রবাহের অন্তর্ভুক্ত। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে গেলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসাবে আজ থেকে চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে।

সরেজমিন শহর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ‘গরমের তীব্রতায় চারদিকে হাঁসফাঁস অবস্থা। যেদিকেই চোখ যায়, শুধু প্রখর সূর্যের তীব্র চোখরাঙানি। আকাশের কোনো দিকে নেই মেঘের দেখা। পুরো আকাশ ঝকঝকে। রোদে পুড়ছে পথঘাট, বাতাসে যেন ঝরছে আগুনের ফুলকি। গ্রীষ্মের দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকেরা বিপাকে পড়েছেন।

শহরের কোর্ট রোড, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, বড় বাজার শহীদ আবুল হোসেন সড়কের কয়েকটি স্থানে বিটুমিন গলে যেতে দেখা গেছে। আর গরমের কারণে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরায় নেমেছে ছন্দপতন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকে। রিকশা ও ভ্যানচালকেরা কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন। অনেকে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। রোদ আর গরমের মধ্যে অনেক দিনমজুরকে জরুরি কাজ করতেও দেখা গেছে। ঘামে তাঁদের পুরো শরীর ভিজে গেছে।

চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে ২৫ শয্যার বিপরীতে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে ৭৩ জন। আর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছে শিশুসহ ১১৪ জন। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে ৫ শতাধিক রোগী। রোগীর চাপ থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার নাজমুস সাকিব বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়াজনিত রোগী আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আমরা বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শও দিচ্ছি। বিশেষ করে যাঁরা রোদে কাজ করছেন, মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। হিট স্ট্রোকেরও একটা ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বেশি বেশি পানি ও স্যালাইন খেতে হবে। হাসপাতালে বর্তমানে স্যালাইন পর্যাপ্ত আছে।’

দিনমজুর ফকির আক্কাস আলী বলেন, ‘আমরা সাধক মানুষ, গরম সহ্য করতে পারব, সাধারণ মানুষ তা পারবে না। দিনমজুরদের জন্য খুবই কষ্টকর। সপ্তাহে দু-তিন দিন কাজ হচ্ছে। বসে থাকতে হচ্ছে।’

শহরের মুরগি খামারি আফজালুল হক বলেন, ‘তীব্র গরমে পোলট্রি, লেয়ার, কালার বার্ড, সোনালিসহ বিভিন্ন জাতের মুরগি মারা যাচ্ছে গরমে। এ ছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আরও বেশি হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এতে খামারিদের পথে বসার অবস্থা।’

চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

শরবত বিক্রেতা আলামিন হোসেন বলেন, ‘গরমে ফ্যানের বাতাসেও বসা যাচ্ছে না। পড়াশোনার পাশাপাশি একটা শরবতের দোকান দিয়েছি। আলহামদুল্লিলাহ ভালো বিক্রি হচ্ছে।’

কলেজছাত্র রাকিব হোসেন বলেন, ‘গরমে বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই। জরুরি কাজ ছিল, তাই বের হয়েছিলাম। কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত বাড়ি যেতে পারলে বাঁচি।’

ইজিবাইকচালক জহির আলী বলেন, ‘গরমে বেশির ভাগ সময় বসেই থাকতে হচ্ছে। গরমে ভাড়া হচ্ছে না খুব একটা। প্রচণ্ড গরম, সবদিক থেকে সমস্যা।’

রিকশাচালক রমেন সরকার বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে ভাড়া হচ্ছে না। যেখানে পারছে গাছের তলায় বসে আছে। তারপরও আশায় আছি, যদি কোনো ভাড়া হয়। ভাড়া না হলে সংসারে টান পড়বে।’

চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন সড়কে পিচ গলে যাওয়ার খবর পেয়েছি। সেসব স্থানে বালু ছিটানো হচ্ছে, যাতে যান চলাচলে সমস্যা না হয়। গরম আরও বাড়লে বাড়তি ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শনিবার চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত