Ajker Patrika

মধ্যরাতে ফোন করে জানানো হয় স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে গৃহবধূ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ২২: ১৫
Thumbnail image

‘রাত আড়াইটায় হঠাৎ মোবাইলে ফোন করে এক ব্যক্তি বলেন, আপনার স্বামী রিপন মেম্বারকে হত্যা করা হয়েছে! রাস্তার পাশে পড়ে আছে, এসে নিয়ে যান। তখন গিয়ে দেখি রিপন রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। সেখান থেকে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি, সকালেই মারা যায় সে।’ 

দুই শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলছিলেন নিহত হাবিবুর রহমান রিপনের স্ত্রী তানিয়া খাতুন। 

নিহত হাবিবুর রহমান রিপন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার মীন গ্রামে। তাঁর স্ত্রী তানিয়া খাতুন উপজেলার মীন গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম দুলালের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ তুলে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগ। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত হাবিবুর রহমান রিপনের স্ত্রী তানিয়া খাতুন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাকিম আহমেদ, নিহতের বাবা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ অন্যরা। 

হাবিবুর রহমান রিপনতিন মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তানিয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের পরিবার স্বাধীনতার আগে থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে আমার শ্বশুর আবুল কালাম আজাদ আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আমার স্বামী আমার শ্বশুরের সঙ্গে বাড়ির জমি দেখাশোনা করতেন।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঘায়েল করতে কিছু বিএনপি ও নব্য আওয়ামী লীগ নেতারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। শুনেছি একসময় বিএনপি করলেও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ পেয়েছেন বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম দুলাল। পদ পাওয়ার পর অন্যদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলায় তাঁর অবস্থান শক্ত করতে প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। আমার স্বামী হাবিবুর রহমান রিপনকে তাঁরা পিটিয়ে হত্যা করেন।’ 
 
তানিয়া খাতুন আরও বলেন, ‘মৃত্যুর দুই থেকে তিন মাস আগে তাঁরা বিভিন্ন সময় রিপনকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে একটি দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে মীন গ্রাম বাজারে তাঁকে আক্রমণও করেন তারা। তখন প্রাণে বেঁচে গেলেও এবার বাঁচতে পারেনি আমার স্বামী। মামলার পর কিছু আসামি জামিন পেয়ে ঢাকা নিউমার্কেট এলাকায় নজরুল ইসলাম দুলালের বাসায় বৈঠক করেন। আমরা জানতে পারি, পরিকল্পিতভাবেই তাঁকে হত্যার নির্দেশে ছিল নজরুল ইসলাম দুলাল ও তাঁর ভাই আবাইপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস। এই পরিকল্পনা তাঁদের বাড়িতেই হয়েছিল।’ 

লিখিত বক্তব্যে নিহতের স্ত্রী বলেন, ‘ঘটনার পর সুজন নামের এক ব্যক্তি ফোন করে বলে, রিপন মেম্বারকে মেরে ফেলা হয়েছে, এসে নিয়ে যান। জামিন পাওয়া আসামিরা এখন আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।’ 

রিপনের স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে তাঁর স্বামী হত্যার নির্দেশদাতাসহ অন্যদের সঠিক বিচার দাবি করে বলেন, ‘৩ মাসের শিশু তাবিব আহনাফ ও ৫ বছরের শিশু আবিদ আহনাফ, তারা এখনো জানে না তাদের বাবা আর কখনো ফিরে আসবে না। এখন বড় ছেলে বলে বাবা কোথায় গেছে মা? কিন্তু তার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারি না। বর্তমানে আমার দুই শিশু সন্তান খুবই অসহায়ের মতো দিন যাপন করছে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রিপন ঘটনাস্থলে মরেছিল নাকি হাসপাতালে আনার পথে যারা সঙ্গে ছিল তারা মেরেছে, এটা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার। সামনে নির্বাচন, আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী, এখন এমন নানা ষড়যন্ত্র হতেই থাকবে। তবে রিপন হত্যায় জড়িতরা শাস্তি পাক এটা আমি নিজেও চাই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার মানুষ বিভিন্ন সময় আমার কাছে আসে, আমি সহযোগিতা করি। তারা জামিনে মুক্ত হয়ে অফিসে এসেছে এটা দোষের কিছু না। তারা তো দোষী প্রমাণিত হয়নি।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাকিম আহমেদ জানান, মূলত এটি তাঁর পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। এটাকে সমর্থন জানিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। 

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঠাকুরদাস মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার ৫ জন ব্যতীত সকল আসামি জামিনে আছে। তদন্ত শেষে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ 

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই সমর্থক হাবিবুর রহমান রিপন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম দুলালের সমর্থকদের মধ্যে। 

এই দ্বন্দ্বের জেরে গত অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ ভোররাতে আবাইপুর বাজার পার হলেই প্রতিপক্ষের সমর্থকেরা হাবিবুর রহমান রিপনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর নিহতের সমর্থকদের অর্ধশতাধিক বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। 

পরদিন নিহতের ভাই বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের নামে মামলা করেন। তবে এই মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম দুলাল ও ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাসের নাম নেই। 

তবে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত