Ajker Patrika

স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণে গাফিলতি, চরম ভোগান্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

মহসিন মোল্যা, শ্রীপুর (মাগুরা)
স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণে গাফিলতি, চরম ভোগান্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার পূর্ব শ্রীকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু করায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে, পার্শ্ববর্তী মেহগনি বাগিচায়, স্কুলের বারান্ডায় এমনকি ক্লাব ঘরে। দুই বছরের অধিক সময় ধরে এভাবেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের পূর্ব শ্রীকোল ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ স্কুলটি। কুষ্টিয়ার মেসার্স ইউনিক ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দোতলা ভবন নির্মাণে ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও শেষ হয়নি কাজটি। এত দিনের কাজে শুধু পিলারই হয়েছে। রডে ধরেছে মরীচিকা। নতুন ভবন নির্মাণে প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ভবনের দুটি ভবনই ভাঙা হয়েছে। ফলে একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে বারবার অবগত করার পরেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। বরং তাঁদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিলেও বারবার তাঁরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। 

অপর দিকে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি মাত্র ভবন। যার একটি অফিস কক্ষ এবং অপরটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে, বিদ্যালয়ের বারান্দায়, পার্শ্ববর্তী মেহগনি বাগিচা, ক্লাব ঘরে বছরের পর বছর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২০ জন। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বাস সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি কাজের কোনো অগ্রগতি দেখিনি। আমাদের বিদ্যালয়টির শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছি। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত ক্লাস করাতে পারছি না। এমনকি প্রতি মৌসুমেই হয় বৃষ্টির না হয় রোদে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুবই কঠিন সময় পার করছি। অতি দ্রুত নতুন ভবনের কাজ শেষ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’ 

যথাসময়ে স্কুলের ভবনের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরাউপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পূর্ব শ্রীকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা খুবই সমস্যায় রয়েছে। আমি প্রায়ই উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় স্কুলটির সমস্যার কথা বললেও কোনো সমাধান হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও উপজেলা প্রকৌশলীর সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবেই এমনটি হয়েছে।’ 

সাব কন্ট্রাক্টর রিংকু বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে গাড়ি যাওয়ার পরিবেশ না থাকায় কাজটি বন্ধ ছিল। আমরা কয়েক দিন আগে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস থেকে সময় নিয়েছি। এ সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করব।’ 

উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা শাফিন সোয়েব বলেন, ‘যথা সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। সঠিক সময়ে কাজটি শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমি ২ দফা চিঠি দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটি সময় আবেদন করেছেন। নতুন ইট উঠলেই কাজ শুরু করবেন বলে তারা জানিয়েছেন। এরপরেও কাজ না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত