Ajker Patrika

মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল

তীর ভাঙনে বিলীনের পথে রোমজাইপুর, বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

বাগেরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ২২: ১২
ভাঙনের মুখে রোমজাইপুর গ্রাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙনের মুখে রোমজাইপুর গ্রাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেলের অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের রোমজাইপুর গ্রাম। ভাঙনের ধাক্কা লেগেছে পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাইরবুনিয়া গ্রামেও। নদীর তীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে রোমজাইপুর থেকে উড়াবুনিয়া সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে রোমজাইপুর গ্রাম নদীতে হারিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে গ্রামের অন্তত ৩০টি বাড়িঘর ও শতাধিক বিঘা জমি নদীর গ্রাসে চলে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও ভাঙনের কোনো সুরাহা হয়নি। ভাঙনরোধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে আজ বুধবার (৪ জুন) দুপুরে রোমজাইপুর পূর্বপাড়া ঘষিয়াখালী নদীর তীরে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গিয়াস মোল্লা নামের এক স্থানীয় বৃদ্ধ বলেন, ‘প্রতিনিয়তই রোমজাইপুর গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাইরবুনিয়া গ্রাম ভাঙছে। আমার ৫ বিঘার ওপরে জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের বাড়িঘর খেয়েছে এই নদী। বেড়িবাঁধ ছাড়া এই গ্রাম টিকানো সম্ভব না।’

রোমজাইপুর পূর্বপাড়ায় পাঁচ শতাধিক মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন। ‘এখনই টেকসই বেড়িবাঁধ চাই,’ ‘জীবনের বিনিময়ে বাঁধ চাই,’ ‘আমাকে বিক্রি করুণ, তবু বেড়িবাঁধ দিন’—এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ান তাঁরা। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ইউপি সদস্য বয়জিৎ শেখ, ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য রিনা বেগম হেনা, স্থানীয় এলাকাবাসী সন্ধ্যা রানী, তুহিন মোল্লা, শামীম খান, গিয়াস মোল্লা, বাগেরহাট জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাত্তাইন নাঈম, ফাইট ফর কোস্টাল রাইটস অ্যান্ড জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতা মো. মাহফুজ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি আবদুল্লাহ শেখ, তরুণ উদ্যোক্তা ফিরোজ মাঝি প্রমুখ।

স্থানীয় উদ্যোক্তা ফিরোজ মাঝি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে একটাই দাবি, হয় আমাদের জন্য বাঁধ তৈরি করুন, নয়তো আমাদের হত্যা করে ফেলুন। এই বাঁধের অভাবে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি—সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বুকের ওপর দিয়ে জাহাজ চলে যায়, যেখান থেকে সরকারের বিপুল রাজস্ব আয় হয়। কিন্তু সরকার আমাদের জন্য কিছু করে না। এই জাহাজের পানির ধাক্কায় ভাঙন আরও বাড়ছে।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তাঁদের রক্ষা করার দাবি জানান তিনি।

ভাঙনরোধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে রোমজাইপুর পূর্বপাড়া ঘষিয়াখালী নদীর তীরে মানববন্ধন। আজ বুধবার দুপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙনরোধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে রোমজাইপুর পূর্বপাড়া ঘষিয়াখালী নদীর তীরে মানববন্ধন। আজ বুধবার দুপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাট জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাত্তাইন নাঈম বলেন, ‘নদীভাঙন এখানকার মানুষের মৌলিক অধিকারকে হরণ করছে। আমরা চাই, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিক এবং একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করুক।’

ফাইট ফর কোস্টাল রাইটস অ্যান্ড জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতা মো. মাহফুজ বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার মানুষের অধিকার রক্ষায় আমরা কাজ করছি। রোমজাইপুর-উড়াবুনিয়ার এই নদীভাঙন একটি গুরুতর সমস্যা। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, যেন দ্রুত এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়।’

পেড়িখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ইউপি সদস্য বয়জিৎ শেখ বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমাদের এই এলাকা নদীভাঙনের শিকার। বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একটি টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে আমাদের গ্রামের অস্তিত্বই থাকবে না।’

নারী ইউপি সদস্য রিনা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত ভাঙনের ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। সরকার যদি দ্রুত এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করে, তাহলে আমাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এখন যদি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, মানচিত্র থেকে এই নাম হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে মুছে যাবে।’

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, ‘আমরা ভাঙনকবলিত এলাকাটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। এখানকার অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।’ তিনি আরও জানান, ঈদের পর ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে তাঁরা জায়গাটি আবার পরিদর্শন করবেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সমাধানে আসার আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত