Ajker Patrika

হত্যা মামলার আসামিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটের অভিযোগ

নড়াইল প্রতিনিধি 
আসামীপক্ষের লোকদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আসামীপক্ষের লোকদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের কুমারডাঙ্গা গ্রামে খাজা মোল্যা (৪২) হত্যা মামলার আসামিদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বাদীপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। গত এক সপ্তাহ ধরে আসামিপক্ষের প্রায় ৪০টি বাড়িতে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ তালবাহানা করে মামলা নিচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

ক্ষতিগ্রস্ত আইউব শেখের স্ত্রী ফারজানা ববি জানান, তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং সে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। মেয়ের চিকিৎসার জন্য ঘরে রাখা নগদ ৫ লাখ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণ, ছোট-বড় ১৩টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে বাদীপক্ষের লোকেরা। তারা শুধু লুটপাট করেই ক্ষান্ত হয়নি, ঘরে আগুন দিয়ে ১০০ মণ পাট, ৮০ মণ ধানসহ দুটি আমগাছ পুড়িয়ে ফেলেছে। বাড়ির মালামাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ফারজানার আরেক সন্তান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁর।

আসামিপক্ষের পলাশ শেখের স্ত্রী সাবিনা ইসলাম বন্যা বলেন, ‘আমার স্বামী কুমারডাঙ্গা গ্রামসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তিনি অন্যায়-অপরাধমূলক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় তাকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমার বাড়িতেও তারা হামলা করেছে। আমার ঘরের টিন কেটে নিয়েছে। বসবাসের অযোগ্য এখন আমার বাড়ি। লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে বাড়ির মালামাল। প্রতিপক্ষের ভয়ে ছেলে-মেয়ের স্কুল ও কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।’ গ্রামের এসকেন্দার শেখের সঙ্গে খাজা মোল্যার ব্যক্তিগত শত্রুতা ও পূর্ববিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেন।

আসামিপক্ষের আরেকজন ইনসান শেখ। তাঁর স্ত্রী বৃদ্ধা মেহেরুন্নেসা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘খাজা মোল্যা হত্যার পর বাদীপক্ষের লোকজন আমার ঘরবাড়ি ও মালামাল জ্বালিয়ে দিয়েছে। মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। আমার বউমা ও ছেলেকে দালান ঘরে অবরুদ্ধ করে আগুন ধরিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। দরজা ভেঙে তাদের দ্রুত সরিয়ে আনায় এযাত্রায় রক্ষা পেয়েছে তারা। আমার ১২টি মাছের ঘের, ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা এবং কোরবানির গরুসহ বেশ কয়েকটি গরু নিয়ে গেছে। আমি অসুস্থ মানুষ।’

লুট করা হয়েছে আসামীদের গরু। ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায় গোয়াল ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির বৃদ্ধা। ছবি: আজকের পত্রিকা
লুট করা হয়েছে আসামীদের গরু। ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায় গোয়াল ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির বৃদ্ধা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্যবসায়ী রওশন শেখের স্ত্রী রওশন আরা বেগম জানান, তাদের বাড়িতে থাকা ১০০ মণ ধানসহ বিভিন্ন ধরনের শস্য ও বাড়ির মালামাল লুট করা হয়েছে। এ ছাড়া ইব্রাহীম শেখ, মনিরুল মোল্যা, সাদ্দাম শেখেরসহ একাধিক বাড়ি থেকে গরু ও অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে বাদীপক্ষের লোকেরা। মারপিট করে এলাকাছাড়া করা হয়েছে বৃদ্ধ গোলক ও বাবু বিশ্বাসকে।

মঙ্গলবার (২০ মে) রাতেও শহীদ শেখ, শাহীন শেখ ও মিলন মোল্যার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে নিহত খাজা মোল্যার ভাই মামলার বাদী আলী হায়দার মোল্যা বলেন, ‘আমাদের লোকজন আসামিপক্ষের কোনো বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত নেই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

ঘরের মালামাল ভাঙচুর করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘরের মালামাল ভাঙচুর করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক মো. আজিজুর তালুকদার জানান, হত্যা মামলাটির তদন্ত চলছে। মামলায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চলছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কুমারডাঙ্গা বাজারে একটি চায়ের দোকানের সামনে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে খুন হন খাজা মোল্যা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত