Ajker Patrika

সুন্দরবনে পর্যটক বাড়লেও উন্নয়ন হয়নি অবকাঠামোর

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৪, ১০: ৪৫
সুন্দরবনে পর্যটক বাড়লেও উন্নয়ন হয়নি অবকাঠামোর

অপার সৌন্দর্যে ভরা সুন্দরবন দেখতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। সড়কপথে সাতক্ষীরা দিয়ে সহজেই সুন্দরবনে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। ফলে এ পথে পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে। তবে দূরদূরান্ত থেকে সুন্দরবনে বেড়াতে এসে ভালো সড়ক যোগাযোগ ও আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। 

পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। এই অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান হলে প্রকৃতির সঙ্গে ভ্রমণপিপাসুদের আরও সান্নিধ্য বাড়বে, সঙ্গে রাজস্বও—এমনটিই মনে করছেন পর্যটক ও পর্যটনসংশ্লিষ্টরা। 

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের একমাত্র অখণ্ড ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বাঘ, কুমির, বানরসহ ৪৫৩ প্রজাতির বন্য প্রাণীর বাসস্থান রয়েছে সুন্দরবনে। তাই এই বনের প্রতি রয়েছে ভ্রমণপিপাসুদের প্রবল আকর্ষণ। বিশেষ করে শীত মৌসুমে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার উপচে পড়া ভিড় থাকে জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনীতে।

এই দুই গ্রাম দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমান পর্যটকেরা। 

গত অর্থবছরে ৫২ হাজার সাত শ পর্যটক সাতক্ষীরা রেঞ্জ দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন; যার মধ্যে ১২৮ জন বিদেশি ছিলেন। গত অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকা। আর অর্থবছরের পাঁচ মাসে প্রায় ২০ হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন, যা গতবারের একই সময়ের চেয়ে দুই হাজার বেশি। 

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জুন, জুলাই ও আগস্ট—এই তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকে। কোনো পর্যটক বা জেলে-বাওয়ালি এ সময়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেন না। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দরবনের কলাগাছি ও দোবেকি পর্যটন স্থানে যেতে মুন্সিগঞ্জ পয়েন্টে ব্যাপক ভিড়। মুন্সিগঞ্জ ছাড়াও বুড়িগোয়ালিনী এলাকার নীলডুমুর ও কদমতলা থেকেও সুন্দরবনে যাওয়া যায়। তবে এ দুটি স্থানে ভিড় কম। 

যশোরের মনিরামপুর থেকে আসা চাকরিজীবী মোনায়েম হোসেন বলেন, ‘আমরা কয়েক বন্ধু মিলে প্রাইভেট কারে সুন্দরবনে যাব বলে এসেছি। কিন্তু প্রাইভেট কার কোথায় রাখব, নিরাপদ সে জায়গা এখানে নেই।’ 

ট্রলারমালিক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘দীর্ঘদিন মুন্সিগঞ্জ দিয়ে ট্রলারে ওঠার জন্য পন্টুন ছিল না। অনুরোধ করতে করতে একটি পন্টুন পেয়েছি। তবে অন্য দুই জায়গায় এখনো পর্যটকদের ট্রলারে তুলতে পন্টুন নির্মাণ করা হয়নি।’ 

চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা লিংকন বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে ভালো হোটেল-মোটেল নেই, নেই ভালো রেস্টুরেন্ট। রাস্তার অবস্থাও খুব ভালো নয়। ভালো আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট থাকলে পর্যটক দ্বিগুণ হতো এ পথে।’ 

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী বেলাল হোসেন বলেন, অবকাঠামোগত সমস্যা তো রয়েছেই, তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রচারের অভাব। সড়কপথে যে খুব সহজে সুন্দরবনে যাওয়া যায়, এটা দেশের অধিকাংশ লোক জানেন না। 

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে যতটুকু সম্ভব, পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত করা।

আমরা অবকাঠামোগত সুবিধা থেকে পিছিয়ে আছি, এটা সত্য। তবে সরকারিভাবে একটি রিসোর্ট আমরা করেছি। বেসরকারিভাবে কয়েকটি হোটেল রয়েছে। তবে সেটা যথেষ্ট নয়। আমরা পর্যটন করপোরেশনের কাছে চিঠি লিখেছি, যাতে তারা সেখানে হোটেল-মোটেল নির্মাণ করে। এ ছাড়া কয়েক বছরের মধ্যে সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক অচিরেই চার লেনের হয়ে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত