Ajker Patrika

আনারের কোটি টাকার গাড়ি উদ্ধার: সা‌ফিনা টাওয়ারে রাখা তামাক কোম্পানির অন্য গাড়িগুলো উধাও

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ২১: ২৫
কুষ্টিয়া মডেল থানার পার্কিং জোনে রাখা সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুষ্টিয়া মডেল থানার পার্কিং জোনে রাখা সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারতে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের কোটি টাকা দামের একটি গাড়ি পাওয়া গেছে কুষ্টিয়ায়। শহরের মজমপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বহুতল ভবন সা‌ফিনা টাওয়ারের গ‌্যা‌রে‌জে গাড়িটি রেখেছিলেন এক তামাক কোম্পানির দুই কর্মকর্তা। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও গাড়িটির চালকের সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

এদিকে আনারের মেয়ে মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন জানিয়েছেন, গাড়িটি ফিরে পেতে তিনি ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালো রঙের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়িটি গ্যারেজে রাখা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে এলাকাবাসী গত সোমবার রাতে বিষয়টি পুলিশকে জানান। রাতেই যাচাই-বাছাই করে পুলিশ গাড়ির চাবি, সংসদ সদস্যের স্টিকার ও কাগজপত্র জব্দ করে। জব্দ করা একটি কাগজে মালিক হিসেবে আনারের নাম ছিল। পরে জব্দ গাড়িটি গত ‌মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানায় নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে থানায় গিয়ে দেখা যায়, পার্কিং জোনে গাড়িটি রাখা।

আজ বেলা ২টার দিকে সা‌ফিনা টাওয়ারে গিয়ে দেখা মেলে নিরাপত্তারক্ষী আলমগীর হোসেনের। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ১ জুলাই মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ভবনের তিনটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। তিনি তামাক কোম্পানিতে বড় পদে রয়েছেন। প্রায় তিন মাস আগে তিনি গাড়িটি তাঁর চালক দিয়ে পার্কিংয়ে এনে রাখেন।’

ফ্ল্যাটভাড়া চুক্তির কাগজ দেখিয়ে আলমগীর জানান, ফ্ল্যাটগুলো মোস্তাফিজুর ও কোম্পানির লোকজন ব্যবহার করেন। প্রতি মাসে ভাড়া দেন ৪১ হাজার টাকা। তবে গত মাসে মোস্তাফিজুর পরিবার নিয়ে চলে গেছেন। গাড়িটি পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর আর কেউ ফ্ল্যাটে আসেননি। কোম্পানির অন্য গাড়িগুলোও নিয়ে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘জেনুইন লিফ কোম্পানি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। এই কোম্পানির নাম ৫ আগস্টের আগে ছিল ‘তারা টোব্যাকো’। পরে কোম্পানির নাম ও মালিকানা পরিবর্তন হলেও কর্মকর্তা একই থাকেন। এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বিল্লাল হোসেন। অন্যদিকে নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর বিএনপির সাবেক নেতা। তাঁর বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়ায়। তিনি বিগত বিএনপি সরকারের সময় গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি ছিলেন।

এ বিষয়ে মোস্তাফিজুরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ভাড়ার চুক্তিপত্রে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিলে একজন রিসিভ করে বলেন, এটা তাঁর নম্বর নয়।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গাড়িটি সা‌ফিনা টাওয়ারের গ‌্যা‌রে‌জে আনার আগে শহরতলির কানা‌বি‌লের মোড় এলাকায় আরেক তামাক কোম্পানির মালিকের বাগানবাড়িতে ছিল। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওই মালিক।

গত মঙ্গলবার গাড়ি জ‌ব্দের দিন এর চালক শান্ত বলেছিলেন, ‘আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করি। জিএম বিল্লাল স্যার ও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তাঁরা দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন। স্যারদের হুকুমে আমি স্টার্ট দিয়েছি। গাড়ির মালিক কে, তা আমি জানতাম না।’

এ বিষয়ে কথা হলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘গাড়িটি আসলে কারা এখানে এনে রেখেছিল, এর সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। যেহেতু গাড়িটির তত্ত্বাবধানে এখানে কেউ নেই, সেহেতু আদালতে আমরা একটি রিপোর্ট দিয়েছি। আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এদিকে আজ আনা‌রের মেয়ে মুনতা‌রিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমি গাড়িটি ফেরত পেতে কুষ্টিয়ায় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে বলেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত