Ajker Patrika

মর্যাদা ফিরে পেয়ে যশোর এমএম কলেজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনতার ঢল

­যশোর প্রতিনিধি
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনারকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: আজকের পত্রিকা
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনারকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: আজকের পত্রিকা

অবশেষে কেন্দ্রেই ফিরে গেল যশোরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ছয় বছর পর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রীয় মিনারের স্বীকৃতি ফিরে পেল।

দিবসটির প্রথম প্রহর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকীসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, যশোর শিক্ষাবোর্ড, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সমবেত হন এমএম কলেজ প্রাঙ্গণে।

কলেজ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যশোরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়, যেটি এমএম কলেজ নামেই পরিচিত। ১৯৪১ সালে ‘যশোর কলেজ’ নামে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ হয় ‘মাইকেল মধুসূদন কলেজ’। ১৯৬৮ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি এমএম কলেজে স্থাপিত শহীদ মিনারে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিলেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। ২০১৮ সালে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে পৌরসভার তৎকালীন মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু শহরের শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের পাশে (ফাতেমা হাসপাতালের সামনে) নতুন একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এর নাম দেন ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার’। সেটি অপ্রশস্ত একটি স্থানে হওয়ায় এবং দীর্ঘ দিনের শহীদ মিনারকে একা করে দেওয়ায় স্থানীয় সামাজিক ও সংস্কৃতিপ্রেমী ও সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। পৌরসভার মেয়র ও তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা হওয়াতে সেই সময় কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে পারেননি। বিএনপি ও কয়েকটি বাম দল ছাড়া অন্যরা নতুন শহীদ মিনারে যেতে বাধ্য হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুরোনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। এমন প্রেক্ষাপটে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন প্রস্তুতি কমিটির’ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যশোরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বলতে এমএম কলেজের শহীদ মিনারকে বোঝাবে। এই শহীদ মিনারেই এবার ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। একই সঙ্গে পৌরসভার অর্থায়নে নির্মিত শহীদ মিনারটি সাদা কাপড়ে ঘিরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনারকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: আজকের পত্রিকা
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনারকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘ ছয় বছর পর যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনার কেন্দ্রীয় স্বীকৃতি ফিরে পাওয়াতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে কলেজটির শিক্ষক শিক্ষার্থী ও যশোরবাসী। তাঁরা বলছেন, শহরের শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের পাশে অপ্রশস্ত একটি স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ হওয়াতে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা যেতেন না। এখন বৃহৎ ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ফিরে আসায় স্বস্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছেন।

একুশের প্রথম প্রহরে সরেজমিনে এমএম কলেজে দেখা গেছে, ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে হাতে ফুল, কালো ব্যাজ ধারণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢল নামে আপামর জনতা। একুশের প্রথম প্রহর থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। হাজারো মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার অভিমুখে যেতে দেখা গেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনারকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: আজকের পত্রিকা
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনারকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জিলা স্কুল মোড় থেকে এমএম কলেজের দক্ষিণ গেট পর্যন্ত দীর্ঘ সারি। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য। হাতে ফুল নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছেন। খালি পায়ে একে একে তাঁরা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণে বেজে চলেছে একুশের গান। মহান একুশ উপলক্ষে এমএম কলেজ ক্যাম্পাসে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কে নির্মিত শহীদ মিনারে আমরা কোনো দিনই যাইনি। এমএম কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত শহীদ মিনারকেই আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মানি। আমাদের দল বরাবরই দাবি করে আসছিল, এই শহীদ মিনারেই যেন শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। সেখানে এখন পর্যন্ত আমাদের পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী যুবমৈত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত