Ajker Patrika

হেক্সিসল, সাবান, মেরিল দিয়ে হাত ধুয়েও আঙুলের ছাপ মেলেনি

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ মে ২০২৪, ১৮: ২৪
Thumbnail image

দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যশোরের শার্শায় ভোট দিতে এসে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন অনেকেই। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার অন্তত পাঁচটি কেন্দ্র ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

ইভিএমের মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছেন উপজেলার ভোটাররা। ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। উপজেলা ও একটি পৌরসভায় ১০২ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বুরুজবাগান পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি অনেকটা কম। কেন্দ্রের তিন নম্বর কক্ষের ভোট গ্রহণের সামনে একটি চেয়ারে মুখে বিরক্ত আর ক্লান্তির ছাপ নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় ষাটোর্ধ্ব সফিউর রহমান বকুলকে।

ভোট দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের স্বরে বলেন, ‘দেড় ঘণ্টা ধরে এই কক্ষে বসে আছি। চারবার ভোট দিতে এসেছি; একবারও ভোট দিতে পারিনি। আঙুলের ছাপই মিলছে না।’

এই বৃদ্ধের ভাষ্য—বারবার হেক্সিসল, সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি, মেরিল দিয়ে ঘষেও তাঁর আঙুলের ছাপ মেলেনি। পরে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁকে বসিয়ে রেখে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে খবর দেন।

চারবার চেষ্টা করে ভোট দিতে না পেরে যাওয়ার পথে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এই দেশের নাগরিক না। কতবার ভোট দিয়েছি; এবার ভোটই দিতে পারলাম না।’

একই কক্ষের পোলিং অফিসার তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘বয়স্কদের হাতের আঙুলের ছাপ মিলতে দেরি হচ্ছে। সাড়ে তিন ঘণ্টায় ৭৪ জনের ভোট গ্রহণ হয়েছে। হাতের আঙুলের ছাপ না মেলানোয় আরও দেরি হচ্ছে। হাতের আঙুলের ছাপ না মেলায় এই কক্ষের ২০ থেকে ২৫ ভোটার চলে গেছেন।’

কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুর রাশেদ বলেন, ‘ভোট গ্রহণে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। রং মিস্ত্রি, বয়স্ক, কর্মকার, শ্রমিক শ্রেণির ভোটারের হাতের ছাপ মিলছে না। অনেকেই চলে যাচ্ছেন। অনেকের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

নাভারন রেল বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (নারী) কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শহিদুল আজম জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিন ঘণ্টায় ৩ হাজার ১৬ ভোটের মধ্যে ৩০০ ভোট কাস্ট হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতি কম। ইভিএমে ভোট গ্রহণে মাঝেমধ্যে হাতের ছাপ না মেলায় ধীর গতি হয়েছে।

এ বিষয়ে সকালে কথা হয় বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার গোলাম রসুল রানার সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাড়ে চার ঘণ্টায় ২ হাজার ৬১৩ ভোটের মধ্যে ভোট গ্রহণ হয়েছে ২৯৪টি। ভোটারদের উপস্থিতি কম; আবার কোনো কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট গ্রহণে একটু ধীর গতি হয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে। আমরা তাঁদের পরামর্শ দিয়ে দুপুর নাগাদ আরেকবার আসতে।’

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন।

একাধিকবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেন সফিউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকাসাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে সে সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বয়স্কদের আঙুলের রেখা মুছে যাওয়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একাধিকবার চেষ্টার পর অনেকের ভোট হয়েছে।

নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, যশোরের শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ৮টি (একটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) পদে ২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

শার্শা উপজেলায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মিন্নু (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল (ঘোড়া), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অহিদুজ্জামান অহিদ (আনারস) এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন (দোয়াত-কলম)।

চতুর্থবার চেষ্টার পরও আঙুলের ছাপ মেলেনি সফিউর রহমানের। ছবি: আজকের পত্রিকাভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার (তালা), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সরদার সাহরিন আলম বাদল (টিউবওয়েল), যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মিলন (টিয়া পাখি) এবং শফিকুল ইসলাম মন্টু (চশমা)।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। তাঁরা হলেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আলেয়া ফেরদৌস (হাঁস), নাজমুন নাহার (ফুটবল) এবং জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা আলম সালমা (কলস)। 

চৌগাছায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীম রেজা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমে ২৯৩টি কেন্দ্রের ২১৭৩টি কক্ষে এদিন ভোট দেন ভোটাররা।

উপজেলা তিনটিতে মোট ভোটার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭১১। বেলা ১টা পর্যন্ত তিন উপজেলায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। তিন উপজেলায় ভোটারদের উপস্থিত কম বলে নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত