Ajker Patrika

‘১১ দিন কেন, ১১ বছর লাগলেও মেয়ের লাশ ফিরিয়ে আনতাম’

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪, ২০: ৫৮
‘১১ দিন কেন, ১১ বছর লাগলেও মেয়ের লাশ ফিরিয়ে আনতাম’

পরিচয় নিয়ে বির্তকের অবসান শেষে বৃষ্টি খাতুন আজ শুধুই অতীত। তাঁর নিথর দেহ এখন অন্ধকার কবরে। আর এক দিন পরেই তাঁর বাড়িতে মানুষের আনাগোনা কমে যাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে ভুলে গেলেও মেয়ে হারানোর কষ্ট আমৃত্যু বয়ে নিয়ে বেড়াবেন মা-বাবা।

রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায়। আজ সেখানে গেলে স্বজন ও প্রতিবেশীদের এ প্রতিবেদকের কাছে এমন কথাগুলোই বললেন। গতকাল সোমবার রাতেই বাড়ি থেকে ১০০ গজ দূরে বাঁশবাগানের ভেতর বড় চাচার কবরের পাশে বৃষ্টি খাতুনকে সমাহিত করা হয়েছে।

বাড়ির ভেতর স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড় থাকলেও কেমন একটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। ঘরের ভেতর থেকে মাঝেমধ্যে বিলাপের সুর ভেসে আসছিল।

এ সময় ফুফু রোজিনা খাতুন জানান, মেয়ে হারানোর শোকে মা আহাজারি করছেন। তাঁকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও থামানো যাচ্ছে না। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।

ঘরের ভেতর গিয়ে দেখা যায়, বারবার মেয়ের নাম ধরে চিৎকার করছেন মা বিউটি বেগম। মেয়ের লাশ ফেরত পেয়েছেন, দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এটাও অনেক বড় শান্তি।

বৃষ্টি খাতুন।মেয়ের জন্য দোয়া চেয়ে বিলাপ করতে করতে বিউটি বেগম বলেন, ‘নিজের সন্তান নিজের কাছে নিয়ে আসছি শান্তি তো লাগবেই। আমার যে বুক ভরা আশা, তা যে ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে।’

একদিকে মেয়েকে হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে লাশ ফেরত পাওয়া নিয়ে জটিলতায় বাবা সবুজ শেখকে যেন পাথর করে দিয়েছে। আদরের বড় মেয়েকে বড় ভাইয়ের কবরের পাশে নিজ হাতে সমাহিত করার একটি দিন এখনো পার হয়নি।

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যারা ষড়যন্ত্র করে মেয়ের লাশ আটকে রেখেছিল, তাদের কাছে কোনো প্রমাণ ছিল না। আমাকে ১১ দিন হয়রানি করা হয়েছে। ১১ দিন কেন, ১১ বছর লাগলেও আমার মেয়ের লাশ আমি ফিরিয়ে আনতাম। সব তথ্য-প্রমাণ দিয়েই আইনের মাধ্যমে আমি মেয়ের লাশ ফিরিয়ে এনেছি। মেয়ের লাশ নিতে যারা বাধা সৃষ্টি করেছিল, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।’

গতকাল সোমবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে বৃষ্টি খাতুনের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি তাঁর গ্রামের বাড়ি পৌঁছায়। এ সময় বৃষ্টির লাশের অপেক্ষায় থাকা শোকার্ত স্বজন ও গ্রামের মানুষের ঢল নামে। বৃষ্টির লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে শোকার্তদের মাতম করতে দেখা যায়।

রাত পৌনে ১০টার দিকে বনগ্রাম পশ্চিম পাড়ার জামে মসজিদের মাইকে বৃষ্টির জানাজার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর নিজের বাড়ির আঙিনায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক শ মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন। জানাজার পরে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চাচা মোবারক শেখের কবরের পাশে বৃষ্টিকে সমাহিত করা হয়।

বৃষ্টি খাতুন ঢাকায় সাংবাদিকতা করতেন। তিনি সেখানে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। তবে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে বৃষ্টি খাতুন নাম রয়েছে। তাঁর বাবার নাম সবুজ শেখ ও মা বিউটি খাতুন। তাঁরা তিন বোন। বৃষ্টি ছিলেন সবার বড়।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন বৃষ্টি খাতুন। পরিচয় জটিলতায় টানা ১১ দিন পর আদালতের মাধ্যমে গতকাল সোমবার বিকেলে বাবা সবুজ শেখের কাছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট মর্গ থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

চট্টগ্রামে হামলায় ‘নিরাপত্তাহীন’ পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত