Ajker Patrika

যশোরের গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা

ওষুধ নেই কমিউনিটি ক্লিনিকে

  • স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছাতে যশোরে গ্রামীণ পর্যায়ে ২৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে
  • এখন ৩-৪ মাস ধরে কোনো ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না
জাহিদ হাসান, যশোর ও আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
যশোরের মনিরামপুরে সেবা নিচ্ছেন এক রোগী। সম্প্রতি নেবুগাতী কমিউনিটি ক্লিনিকে। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরের মনিরামপুরে সেবা নিচ্ছেন এক রোগী। সম্প্রতি নেবুগাতী কমিউনিটি ক্লিনিকে। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পলাশী পূর্বপাড়ার ভ্যানচালক মিজানুর রহমান জ্বর-ব্যথা নিয়ে গিয়েছিলেন পাশের বাসুদেবপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মিতা রাণী দত্ত রোগের কথা শুনেই তাঁকে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ মিতা জানান, তাঁদের এখানে ওষুধ নেই।

ক্লিনিকের প্রধান ফটকের সামনে আলাপকালে হতাশ কণ্ঠে মিজানুর বলেন, ‘চার দিন ধরে জ্বর ও গায়ে ব্যথা। জ্বরের কারণে ভ্যান চালাতে পারছিলাম না। তাই এসেছিলাম কমিউনিটি ক্লিনিকে; কিন্তু কোনো ওষুধ দেয়নি। আমাদের মতো গরিব খেটে খাওয়া মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এটা। সরকার ওষুধ দিতে না পারলে এসব খুলে রেখেছে কেন?’

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে অন্তত ১০ রোগীকে খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে এই ক্লিনিক থেকে। শুধু এটি নয়, যশোরের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ওষুধ সংকট চলছে। মাঝে কিছু ওষুধ সরবরাহ করা হলেও কয়েক মাস ধরে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

জেলা সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছাতে যশোরে গ্রামীণ পর্যায়ে ২৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে বিনা খরচে চিকিৎসার পরামর্শ ও ওষুধ দেওয়ার কথা। ক্লিনিকগুলোর দায়িত্বে থাকা সিএইচসিপিরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে তিন মাস পরপর ক্লিনিকে ওষুধ আসত। স্থানীয়দের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রতি ক্লিনিক দু-তিন কার্টন ওষুধ সরবরাহ করা হতো। এখন ৩-৪ মাস ধরে কোনো ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না।

ক্লিনিকগুলো শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চালু রাখার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র উল্টো। অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ ক্লিনিক সকাল ১০টার পর খোলা হয় এবং বেলা দেড়টার পরই বন্ধ হয়ে যায়।

রোহিতা কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে কথা হয় কৃষক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নিতে এসেছিলাম। আগে এখান থেকে ফ্রি পেতাম, তবে অনেক দিন থেকে আর পাচ্ছি না। এখন দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে।’

জানতে চাইলে রোহিতার সিএইচসিপি দেবব্রত সরকার বলেন, ‘২৭ এপ্রিল আয়রন, জিংক, বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, প্রেশারের ওষুধসহ ২২ ধরনের ওষুধের একটি কার্টন পাইছি। চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে তা দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। আগে প্রয়োজন অনুযায়ী তিন কার্টন পেতাম। এখন ওষুধ দিতে পারি না। রোগীরা এসে জ্বর, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, ব্যথা, সর্দি, কাশি, চুলকানি, দাদ, অ্যালার্জি, ক্যালসিয়ামের ওষুধ চায়। আগে দৈনিক ৪০ জন রোগী আসত। এখন ওষুধ না থাকার খবর জানতে পেরে রোগী আসে না।’

নেবুগাতী এলাকার কমলা বিশ্বাস বলেন, ‘বাড়িতে পানি উঠে হাত-পায়ে চুলকাচ্ছে। ক্লিনিকে ওষুধ নিতে আইছি; কিন্তু বলল ওষুধ নাই।’ সেখানকার সিএইচসিপি মিঠু বিশ্বাস বলেন, ‘গত বছরের মাঝামাঝি ওষুধ পাইছি। এরপর আর আসেনি। পুরোনো ওষুধ দিয়ে কোনো রকমে চালাচ্ছি। ওষুধ না দিতে পারলে পরামর্শ দিয়ে বিদায় দিচ্ছি।’

নাম প্রকাশ না করে এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ওষুধ নেই। রোগীরা এসে গালমন্দ করেন, বিষয়টি খারাপ লাগে। আমরা উপজেলার কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, যা আছে সেটা দিয়েই চিকিৎসা দেন। না থাকলে পরামর্শ দেন।’

এ নিয়ে কথা হলে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমেদ ফয়সাল বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বেশ কিছুদিন ধরে ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। গত এপ্রিলে কিছু ওষুধ সরবরাহ দিতে পেরেছি। এরপর আর ওষুধ আসেনি। ওষুধ না পাওয়া পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

যোগাযোগ করা হলে জেলা সিভিল সার্জন মাসুদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আট মাস ধরে ওষুধের সংকট। আমরা প্রতি মাসেই চাহিদা পাঠাচ্ছি। তবে আসছে তিন ভাগের এক ভাগ। এতে প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে, জনগণ খালি হাতে ফিরছে—এটা সত্যি। তবে আগামী মাস থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে ধারণা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত