Ajker Patrika

জঙ্গি সন্দেহে খুবির তিন ছাত্রসহ ৪ জন গ্রেপ্তার

খুলনা ও খুবি প্রতিনিধি
Thumbnail image

জঙ্গি সন্দেহে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) তিন ছাত্রসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (কেএমপি)। গতকাল শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে মহানগরীর হরিণটানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

এ সময় বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধারসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

আজ রোববার কেএমপির সদর দপ্তরে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, এর মধ্যে খুবির তিন ছাত্র জনৈক ফকির রেজা উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মো. শাকিল আহম্মেদ (২৬), মো. রিজভী আজিম খান (২৭) এবং গণিত ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মেহেদী হোসেন সালিত (২৪)। 

শাকিল আহম্মেদ খুবি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে সরকারি চাকরি জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন। মো. রিজভী আজিম খানও খুবি থেকে অনার্স সম্পন্ন করে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি সোনাডাঙ্গার প্যারেন্টস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া মেহেদী হোসেন সালিত গণিত ডিসিপ্লিনে অধ্যয়নরত ছিলেন। 

খুলনায় জঙ্গি সন্দেহে চারজন গ্রেপ্তার। ছবি: আজকের পত্রিকাগ্রেপ্তার আরেক জন হলেন মো. আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি (৩৬)। তিনিই মূলত খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর কার্যক্রম প্রচার–প্রসারের দায়িত্ব পালন করেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। 

তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে যান। 

এর আগে ২০১১ ও ২০১৩ সালে ডিএমপির গুলশান থানা এবং ২০১৫ সালে ডিএমপির ভাটারা থানায় গ্রেপ্তার হয়ে ৩,৭ ও ১৩ মাস কারাভোগ করেছেন। তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে জুম মিটিং ও গোপন বৈঠকের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ এবং রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। 

পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া খুবির তিনজন গত ৬ / ৭ মাস ধরে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে চারটি ল্যাপটপ, ছয়টি মোবাইল ফোন, দুইটি পেনড্রাইভ, একটি এটিএম কার্ড এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর’ সংশ্লিষ্ট উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া গেছে। 

মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সংগঠনের খুলনা অঞ্চলের প্রধান মো. আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকির সঙ্গে ৬ / ৭ মাস আগে মো. শাকিল আহম্মেদ, মো. রিজভী আজিম খান ও মেহেদী হোসেন সালিতের পরিচয় হয়। এরপর থেকেই তার নির্দেশনায় তারা জুমসহ বিভিন্ন অ্যাপস ও প্রটেকটিভ টেক্সটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর জন্য সদস্য সংগ্রহ ও জঙ্গিবাদের দীক্ষা প্রদান চালিয়ে যাচ্ছিল। পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আটকের পর জব্দ করা ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিশ্লেষণ ও আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আরও অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে হরিণটানা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গি, জুয়া, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার রয়েছে। অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর। 

পুলিশ জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তহারীর নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছিল। মূলত তারা প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সংবিধান মানে না। এ লক্ষ্যে তারা সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী পর্যায়ে এবং বিশেষত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং সমাজের মেধাবী মানুষদের উগ্রবাদী আদর্শে প্রভাবিত করে জঙ্গি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে শতভাগ ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান লিমন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত