Ajker Patrika

বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকলেও কমেছে যাত্রী পারাপার

­যশোর প্রতিনিধি
Thumbnail image
প্রায় যাত্রীশূন্য বেনাপোল বন্দর। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকলেও কমেছে যাত্রী পারাপার। কদিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতে অস্থিরতা বিরাজ করায় দুই দেশের যাত্রীরা যাতায়াতে আগ্রহী না হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সোমবার ভারতে গেছে এক হাজার ৯৮২ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে ১ হাজার ৯৪২ জন। আর আজ মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত ভারতে গেছে ৭৭৫ জন, ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৭৬৯ জন। স্বাভাবিক সময়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার যাত্রী দৈনিক যাওয়া আসা করে। নতুন করে ভিসা না দেওয়া ও দুই দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য যাত্রীদের আগ্রহ কমেছে।’

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেনাপোল বন্দরের ইমিগ্রেশন আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল অনেকটা ফাঁকা। আগে যেখানে ভারতে প্রবেশের আগে পাসপোর্ট ভিসাসহ যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে যাত্রীদের দীর্ঘ সারিতে দাঁড়াতে হতো, এদিন অপেক্ষা না করেই দ্রুত সময়ে ভারতে প্রবেশ করে যাত্রীরা। ইমিগ্রেশন কেন্দ্রগুলোতেও কোনো ভিড় দেখা যায়নি। দু-একজন করে যারা আসছে, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত তারা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছে।

ভারতের বারাসাত ভ্রমণ শেষে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকার হিরা লাল দাস। এই যাত্রীর ভাষ্য, ‘কোনো ভিড় নেই। ১০ মিনিটে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন থেকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন শেষ করে যাত্রী টার্মিনালে এসেছি। অথচ ১৫ দিন আগে বেনাপোল বন্দর থেকে পেট্রাপোল যেতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল। আতঙ্কের কারণে অনেক বাংলাদেশি আছেন যারা চেকপোস্ট বন্ধের খবর শুনে দেশে ফিরছেন। তবে আমরা স্বাভাবিক দেখলাম দু স্থানেই। তবে মানুষের ভেতর এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

মুন্সিগঞ্জের সুমন নামে ভারত ফেরত এক যাত্রী বলেন, ‘যাত্রী পারাপার তেমন একটা ভিড় নেই। বিগত সময়ে যেভাবে ভিড়ভাট্টার মধ্যে আসতে হয়, সেটা নেই বললেই চলে। দুই দেশে একধরনের অস্থিরতায় ভারতে যাতায়াতে প্রভাব পড়েছে।’

ভারত ফেরত পাসপোর্টধারী শাহাবুদ্দীন বলেন, ভারতের কিছু মানুষ পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ শহরে মাইকিং করে বাংলাদেশিদের হোটেলে থাকা বন্ধ করতে মালিকদের চাপ প্রয়োগ করেছে। তাতে সাধারণ বাংলাদেশিদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়ালে অনেকে দেশে ফিরে আসছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে পাসপোর্টধারীরা সেখানে অবস্থানে সহযোগিতা পেয়েছে।

বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক: বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আজ সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্য নিয়ে আসছেন ভারতীয় ট্রাকচালকেরা। বাংলাদেশ থেকে পণ্য খালি করে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতে যেতে দেখা গেছে।

সোলাইমান শেখ নামের এক ভারতীয় ট্রাকচালক বলেন, ‘আগের চেয়ে বর্ডার একটু কড়া। তবে মালামাল রপ্তানিতে আমাদের কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি কেউ। স্বাভাবিক সময়ের মতো পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য খালি করে ফিরে এসেছে। সেখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটু জোরদার করা হয়েছে।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল সোমবার ২০১টি পণ্যবাহী ট্রাক রপ্তানি হয়, আমদানি হয় ২৪৩ ট্রাক। আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১০৫টি ট্রাক আমদানি হয়েছে, রপ্তানি হয়েছে ১০০ ট্রাক। দুই দেশের এমন পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে আমদানি-রপ্তানির প্রভাব পড়তে পারে।’

এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দরের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধে পেট্রাপোলের কাছে সভা করেছে বিজেপি। গতকাল সীমান্তে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিল দলটি। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও পুলিশের বাধার মুখে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে সীমান্তের কাছে প্যান্ডেল করে সভা করে বিজেপি। সেখানে বক্তব্য দেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। যা বেনাপোল স্থলবন্দর শূন্য রেখা থেকে দেখা গেছে। শুভেন্দুর বক্তব্য চলাকালে বন্দরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ সময় স্থলবন্দরের কর্মকর্তা ও ভারতগামী যাত্রীরা শূন্যরেখার আশপাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশিদের উদ্দেশ করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত